গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার হরিনাথপুর ইউনিয়নের তালুক কেঁওয়াবাড়ী গ্রামের বাসিন্দারা এক অজানা প্রাণীর আতঙ্কে দিন গুনছেন। এরই মধ্যে গ্রামের মসজিদের ১জন ইমামসহ মোট ১২জন আহত হয়েছেন। আহত হওয়ার পর কিৎসাধীন অবস্থায় ইমাম ফেরদৌস সরকার রুকু নামে একজন বৃদ্ধ মারা যান।
আহতদের মধ্যে রয়েছেন হরিণাথপুর গ্রামের আমরুল ইসলাম (৩১), সুমি বেগম (৪০), তালুক কেঁওয়াবাড়ি গ্রামের শেফালী বেগম (৩০), মুক্তা বেগম (২৮), কিশামত কেঁওয়াবাড়ী গ্রামের আফছার আলী (৩৫), ব্রাহ্মভিটা গ্রামের হামিদ মিয়া (৪০), হরিণাথপুর গ্রামের মনজিলা বেগম (৫০), তালুক কেঁওয়াবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র মো. রাব্বী শেখ (১০) সহ আরো অনেকে।
এই প্রাণীর হাত থেকে গ্রামের কুকুর ও রক্ষা পায়নি বলে জানা যায়। আক্রমণের শিকার হয়ে দুটি কুকুরের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে গ্রামবাসী। অনেক অভিভাবক সন্তানের স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। অনেকে আবার সন্তানদের সাথে করে স্কুলে নিয়ে যান। গ্রামের প্রায় সবাই লাঠি নিয়ে চলাফেরা করে। এই আতঙ্ক ওই গ্রাম ছাড়াও আশপাশের আরও দুই গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে।
স্থানীয়দের অনেকেই এটাকে বলছেন শিয়াল, আবার কেউ বলছেন হায়েনা। আবার কেউ কেউ এটাকে পাগলা শিয়াল বলছেন। তবে কেউ ই সঠিকভাবে শনাক্ত করতে পারছে না প্রাণীটিকে।
আক্রমণের শিকার মো. রাব্বী শেখের মা রুমি বেগম জানান, ‘অচেনা এই প্রাণীর আক্রমণে পার্শ্ববর্তী গ্রামের এক ব্যক্তি মারা গেছেন। আমার ছেলেও আক্রমণে আহত হয়েছে। এখন আতঙ্কে আছি, যদি কিছু হয়ে যায়। ’
নিহত ইমাম ফেরদৌস সরকার রুকুর ভাই সাইফুল ইসলাম টিপু বলেন, “রুকু প্রায় দেড় মাস আগে মাঠে ঘাস কাটার সময় ওই প্রাণী তাকে হামলা করে। এ সময় সে হাতে থাকা কাস্তে দিয়ে প্রাণীটিকে আঘাত করেও রক্ষা পায়নি।”
তার চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে প্রাণীটি পালিয়ে যায়। কিন্তু ততক্ষণে তার নাক ও পেছনের মাংস ছিঁড়ে ফেলাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে যখম সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি জানান, পরে তাকে গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে সেলাই দেওয়াসহ জলাতঙ্ক ও টিটেনাস টিকা দিয়ে বাড়ি নিয়ে আসা হয়। এরপর তিনি আরও দুইদিন হাসপাতালে গিয়ে জলাতঙ্কের বাকি দুইটি ডোজ টিকা নেন। এরপরও অবস্থার অবনতি হতে থাকে। পরে ১৭ অক্টোবর তাকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
এ বিষয়ে পুলিশ বলছে, “এটা কোন ধরনের প্রাণী তা বলা মুশকিল। আমরা মানুষজনকে সতর্ক থাকতে বলছি।” তারা আরও বলে “এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বন ও প্রাণিসম্পদ বিভাগকে জানানো হয়েছে।”