ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আজ ১ লা জুলাই শততম বর্ষ পূর্ণ করলো বাংলাদেশের প্রথম ও সবচেয়ে প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। পা রাখলো ১০১তম বর্ষে। ১৯২১ সালের এই দিনে পথচলা শুরু হয় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের। এখন দেশের প্রধান এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বয়স গোটা এক শতাব্দী (১০০ বছর)।
কেমন ছিল ১০০ বছরের এই দীর্ঘ ভ্রমণ, এখন তা রীতিমতো একটি গবেষণার বিষয়। তবে বিশ্ব খ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেখানে জ্ঞান-বিজ্ঞানে অবদান রাখার জন্য প্রসিদ্ধ হয়, সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বের কাছে বরাবরই তাদের নাম কুড়িয়েছে রাজনীতির পাতায় আঁচড় ফেলে।
১৯১১ সালের বঙ্গভঙ্গ রদের ‘ক্ষতিপূরণে’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় এই অঞ্চলের মুসলিম প্রধান জনগোষ্ঠীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে। তখন এ অঞ্চলের মুসলমানদের মধ্যে মধ্যবিত্ত শিক্ষিত শ্রেণি ছিল খুবই কম। তৎকালীন পূর্ববঙ্গে ব্রিটিশ সরকার এ অঞ্চলে একটি মধ্যবিত্ত শ্রেণি তৈরির লক্ষ্যে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার প্রয়োজন মনে করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে এই অঞ্চলের মানুষের মধ্যে নিজস্ব স্বাধীন প্রতিবাদী চিন্তা ধারা তৈরি হয়। মুসলিম লীগের ডাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা পাকিস্তান আন্দোলনে সাড়া দেয়। পাকিস্তান আদায়ের জন্য শুরু করে আন্দোলন সংগ্রাম। তারপর ১৯৪৮ সালে যখন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দেন, তখনই ছাত্ররা এর চরম বিরোধিতায় নেমে পড়েন। তখন আমাদের মাতৃভাষা বাংলা রক্ষা করার জন্য সংগ্রাম করেন এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা। আর এই ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়েই আমরা ভাষার দাবি সুপ্রতিষ্ঠিত করতে পারি।
১৯১২ সালের নাথান কমিশন ও ১৯১৭ সালের স্যাডলার কমিশনের প্রতিবেদন হয়। তারপর ১৯২০ সালের ২৩ মার্চ তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের আইনসভা ইম্পেরিয়াল লেজিসলেটিভ কাউন্সিল ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যাল অ্যাক্ট-১৯২০’ পাস করেন। পরে ১৯২১ সালের ১ জুলাই থেকে যাত্রা শুরু হয় শতবর্ষী এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
শুধু ভাষা আন্দোলনই নয়, বাঙালির যেকোনো অধিকার আদায়ের জন্য সব সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ৬২ এর শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬ এর ছয় দফা, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ৭০ এর নির্বাচন এবং মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ গঠনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয় মাত্র ৩ টি অনুষদ, ১২টি বিভাগ, ৬০ জন শিক্ষক, ৮৭৭ জন শিক্ষার্থী ও ৩ টি আবাসিক হল নিয়ে। শত বর্ষ পর বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৩টি অনুষদ, ৮৩টি বিভাগ, ১২টি ইনস্টিটিউট, ৫৬টি গবেষণা কেন্দ্র, ২০টি হল ও তিনটি হোস্টেল রয়েছে। এছাড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা মোট ৩৭ হাজার ১৮ জন বিপরীতে শিক্ষক রয়েছেন ১ হাজার ৯৯২ জন অধিভুক্ত ১০৫টি কলেজ ও ইনস্টিউিটে ৪৫ হাজার ৩৭৪ জন শিক্ষার্থী আছেন।
কিন্তু গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি নতুন বিভাগ খুলেছে এই বিশ্বব্যদ্যালয়। আর তাই এখানে অতিরিক্ত ছাত্রভর্তি হচ্ছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক অনুপাতে অসামঞ্জস্য এনেছে। শিক্ষার্থী সংখ্যা রয়েছে অনেক বিপরীতে নেই পর্যাপ্ত আবাসিক সুবিধা। ফলে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের গণরুমে গাদাগাদি করে থাকতে হয়। এ ছাড়াও হলগুলোতে অছাত্র ও বহিরাগতদের থাকার অভিযোগও রয়েছে।
একশ বছর পেরিয়েছে তবুও ডিজিটালাইজড করা যায়নি বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম। ফলে রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ে শিক্ষার্থীসহ অন্যরা নিয়মিত হয়রানির শিকার হন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উপলক্ষে “বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন” পতাকা উত্তোলন কর্মসূচি পালন করেন। নিয়ম মতোই অনুষ্ঠানের শুরুতে গাওয়া হয় জাতীয় সংগীত। জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে জাতীয় পতাকা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা ও অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের পতাকা উত্তোলন করা হয়। পরে এক অনুষ্ঠানে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত বছরব্যাপী কর্মসূচির উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ কে আজাদের সভাপতিত্বে এবং যুগ্ম মহাসচিব আশরাফুল হক মুকুলের সঞ্চালনায় সংগঠনের সিনিয়র সহসভাপতি অ্যাড. মোল্লা মোহাম্মাদ আবু কাওছার, যুগ্ম-মহাসচিব সুভাষ সিংহ রায়, কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মাহবুব হোসেন, অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন প্রমুখ শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন।