নওমুসলিমের কথাঃ শৈশব থেকেই আমি স্রষ্টাকে বিশ্বাসী করি। বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করার সময় অর্থোডক্স সাহিত্য পাঠ করি এবং চার্চে যাতায়াত শুরু করি। এ সময় আমার সামনে এমন কিছু বিষয় চলে আসে, যা কখনো দর্শনের ক্লাসে পাইনি। আর এটা বলতে কোনো দ্বিধা নেই যে, সেখানে আমি অনেক কিছু শিখেছি।
বহু বছর গবেষণা করে আমি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হই যে, কুরআন আল্লাহ তা’আলার বাণী। তাতে মানুষের কোনো সন্দেহ নেই। এই পবিত্র ধর্মগ্রন্থে শাসকের মতো আরোপিত উপাস্যের কোনো অংশগ্রহণ নেই। আমি তখন সিদ্ধান্ত নিলাম, আমার বিশ্বাসের অনুকূল একটি সামাজিক পরিচিতি গড়ে তুলব। হযরত ইবরাহিম (আঃ)-সহ সকল নবী-রাসুলের এক আল্লাহর বিশ্বাসের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করব। সেদিন থেকে আমি অর্থোডক্স চার্চের যাজক পরিত্যাগ করি। সম্ভাব্য শাস্তির কথা মাথায় রেখেই আমি চিন্তা করি যে, আধ্যাত্মিক দ্বিধা বা মানবীয় কল্পনার বিপরীতে সত্য ধারণ করাই হলো বুদ্ধিমানের কাজ। ইসলাম গ্রহণের পর আরবি ভাষাসহ অন্য প্রয়োগিক দিকগুলো আমার শিখতে একটু কঠিন হয়ে পড়ে। তবে আমার মুসলিম ভাইদের সহযোগিতায় তা সম্ভব হয়। আশা করি, তারা আমাকে বৈশ্বিক মুসলিম ভ্রাতৃত্বের জায়গা থেকে গ্রহণ করবে।
মস্কোর চার্চে কাজ করার সময় আমি যখন তখন কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারতাম না। সেখানে একটি পারিবারিক পরিবেশ ছিল, যা আমাকে মধ্য এশিয়ায় নিয়োগের অনুরোধ করতে বাধ্য করেছিল। আমি স্বল্প সময় ফ্রুনজি এবং দীর্ঘ সময় দুশাম্বেতে কাজ করেছি। তখন প্রথমবারের মতো আমি ইসলামী সংস্কৃতি ও প্রাচ্য মানসিকতার সঙ্গে পরিচিত হই, যা আমার আত্মায় গভীর ছাপ ফেলেছিল। ধর্মবিষয়ক কমিশনের অসাম্প্রদায়িক কর্তৃপক্ষের অবাধ্যতার অভিযোগে আমাকে ৬ মাস নিবন্ধন থেকে বঞ্চিত করেছিল। তিন বছর আমাকে কোথাও কেউ গ্রহণ করেনি এবং সব সময় অপমান করা হচ্ছিল। ১৯৮৮ সালে পেরেস্টইকা (সোভিয়েত ইউনিয়নের বিশেষ উন্নয়ন পরিকল্পনা) শুরু হলে আমাকে অবনিস্কের একটি অর্ধ-ধ্বংসপ্রাপ্ত চার্চের জন্য প্রস্তাব করা হয়। সেখান থেকেই আমি ১৯৯০ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের ‘আরএসএফএসআর’-এর সদস্য নির্বাচিত হই।
আমি যখন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছি, তখন গভীরভাবে দেখেছি যে, চার্চ ও রাজনীতির বিভিন্ন কার্যক্রম মানুষের জীবনকে কিভাবে প্রভাবিত করে। কিছু ব্যক্তি খ্রিস্টবাদকে এমনভাবে ব্যাখ্যা করে, যেন রাষ্ট্রের অসততাকে বৈধতা এবং তার একটি পবিত্র রূপ দান করা যায়। প্রশ্ন হতে পারে, বিভিন্ন মুসলিম শাসকদের দ্বারাও একই কাজ হয়েছে। জবাব হলো, কুরআনে কোনো সরকারকে ‘স্রষ্টার অভিষিক্ত’ হিসেবে উপস্থাপন করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। ইসলামের নিয়ম অনুযায়ী কোনো শাসক যদি জনগণের ওপর চেপে বসে এবং তারা তার প্রতি অসন্তুষ্ট থাকে, তাহলে তা পাপের কারণ।
ইসলাম গ্রহণের কারণে মুসলিমরা আমাকে অনেক অভিনন্দন ও ভালোবাসা জানিয়েছে। অপরদিকে চার্চের বহু মানুষ আমার প্রতি অসন্তুষ্ট হয়েছেন। তবে সত্যিকারার্থে আমি কারো খুশি ও অখুশির ভ্রুক্ষেপ করি না। আমি চিন্তা করি, আমি মুসলিম হওয়ায় ‘ডুমা’র কার্যক্রমে কোনো পরিবর্তন আসবে না। খ্রিস্টবাদের সমালোচনায়ও আমি খুব আগ্রহী নই। আগে যখন আমি অর্থোডক্সদের সঙ্গে ছিলাম, তখন আমি এর কঠোর সমালোচনা করেছি। এখন করি না। কুরআনে ইসলামের যে স্বরূপ তুলে ধরা হয়েছে, তাতে বোঝা যায় ইসলাম সবচেয়ে ‘গণতান্ত্রিক’ ধর্ম, মানবতার ধর্ম। ইসলামে জুলুম ও অবিচার করা নিষিদ্ধ। এখানে স্রষ্টার সাথে মানুষ ও পৃথিবীর সংযোগ সরাসরি। কোনো যাজক বা অভিষিক্ত শাসক আল্লাহর সঙ্গে মধ্যস্থতাকারী নয়।