ছোটবেলায় যখন মহররম মাস শুরু হতো, তখন আলাদা একটা ভাব চারিদিকে বিরাজ করতো। কেমন যেনো একটা দুঃখী দুঃখী আমেজ নিয়ে সবাই কথা বলতো। বিয়ে শাদীর অনুষ্ঠান এসময় হতোই না। কারন এটা শোকের মাস। কেউ কেউ আবার মাসের ১ম দিন থেকে রোজা রাখা শুরু করতেন। ১ম দশদিন ব্যাপী কারো না কারো বাড়ীতে চলতো শিরনী বিতরণ। গ্রামের সবার ঘর থেকে চাল, ডাল, টাকা, মুরগী এসব সংগ্রহ করে তৈরি হতো শিরনী। যার যার সামর্থ অনুযায়ী শরীক হতো। এতে কোনো চাপ সৃষ্টি করা হতো না।
মসজিদে মসজিদে দোয়া তাফসির হতো।হুজুরদের দাওয়াত চলতো সবার ঘরে ঘরে।
আশুরার দিন ছোট বড় সবাই দলে দলে মসজিদে জামাতে যোগ দেন।মা,বোনেরা ঘরে ঘরে এবাদত বন্দেগিতে ব্যস্ত থাকেন।এই হলো আমাদের গ্রামীন আশুরা উদযাপন।
কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য, অনেকেই আমরা জানিনা আশুরা কি? আশুরার তাৎপর্যই বা কি?
আমরা আবেগ নিয়ে পূর্ব পুরুষদের অনুসরণ করে যাচ্ছি। কিন্তু সঠিক ইতিহাস জানা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। এমন একটা করুন ইতিহাস আমাদের সবার জানা উচিত। অনেক বড় বড় কাহিনী আমাদের নখ দর্পনে। ইউসুফ জুলেখা, ইব্রাহিম আঃ এর অগ্নিকুন্ড, নুহ আঃ এর প্লাবন, ইসমাইল আঃ এর কুরবানী, ইত্যাদি। কিন্তু কারবালার মর্মান্তিক ঘটনা নিয়ে তেমন আলোচনা চলে না। এতে আগামী প্রজন্ম ইসলামের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কারবালার ইতিহাস যদি প্রাথমিক থেকে শুরু করে মাধ্যমিক পর্যন্ত ধর্ম বিষয়ে অন্তর্ভুক্ত করা যায় তবে শিশুদের পাশাপাশি অভিভাবকরা ও অনেক কিছু জানতে পারবে। মহররম মাসে অনেক উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেছে। এ সবকিছুই সবার জানা দরকার। বর্তমান মিডিয়ার যুগ, কিন্তু সবাই তো আর মিডিয়ার সুবিধা পাচ্ছে না। তাই আমরা সবাই কারবালার সঠিক ইতিহাস জানার চেষ্টা করব। আশুরা নিয়ে শোকের অতিরঞ্জিত মাতম না করে আমরা সঠিকভাবে আশুরা পালন করি এটাই হোক আমাদের প্রতিজ্ঞা।
লেখক পরিচিতি-
ফারহানা ফেরদৌসী
বড়লেখা, মৌলভীবাজার।