প্রথম হিজরি। রাসুলুল্লাহ (সা:)-মক্কা থেকে মদিনা গেলেন। নবী (সা.)-এর মক্কা থেকে মদিনা পৌঁছার সেই দিনটি ছিল ইয়াওমুল আরুবা (শুক্রবার)। সেদিন তিনি বনি সালেম গোত্রের উপত্যকায় যান। সেখানে যাওয়ার পরেই জোহর নামাযের সময় শুরু হয়ে যায়। কিন্তু তিনি জোহর নামাযের পরিবর্তে জুমার নামায আদায় করেন। আর এটাই হলো ইতিহাসের প্রথম জুমার নামায। তবে এর আনুষ্ঠানিক সূচনা হয় অনেক পরে।
রাসুলুল্লাহ (সা:)-মদিনায় যাওয়ার পরে এবং জুমার নামায ফরজ হওয়ার আগে একদিন মদিনার আনসার সাহাবিরা আলোচনা করার জন্য একত্রিত হলেন। তারা বললেন, ‘ইহুদিদের জন্য সপ্তাহে নির্দিষ্ট একটি দিন রয়েছে, যে দিনে তারা সবাই একত্র হয়। নাসারারাও সপ্তাহে একদিন একত্র হয়। সুতরাং আমাদের জন্য সপ্তাহে নির্দিষ্ট একটি দিন হওয়া প্রয়োজন, যে দিনে আমরা সবাই সমবেত হয়ে আল্লাহকে স্মরণ করব, নামায আদায় করব। ইহুদিদের জন্য শনিবার আর নাসারাদের জন্য রবিবার নির্ধারিত। অতঃপর তারা আলোচনা করে ইয়াওমুল আরুবা অর্থাৎ শুক্রবারকে গ্রহণ করলেন এবং তারাই এদিনকে ‘জুমার দিন নামকরণ করলেন।’ (সিরাতুল মুস্তাফা ও দারসে তিরমিযি)
জুমার নামাযের বিধান-
জুমাবার অর্থাৎ শুক্রবার জুমার নামাযকে ফরজ করা হয়েছে। জুমার দুই রাকাত ফরজ নামায ও ইমামের খুতবাকে জোহরের চার রাকাত ফরজ নামাযের স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে। হযরত তারেক ইবনে শিহাব (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা:)-বলেছেন, ‘ক্রীতদাস, মহিলা, নাবালেগ বাচ্চা ও অসুস্থ ব্যক্তি এই ৪ প্রকার মানুষ ছাড়া সকল মুসলমানের ওপর জুমার নামায জামাতে আদায় করা ফরজ।’ (আবু দাউদ, হাদিস নং- ১০৬৭)।
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে বলা হয়েছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো শরিয়তসম্মত কারণ ছাড়া জুমার নামায বর্জন করবে, তার নাম মুনাফিক হিসেবে এমন দপ্তরে লিপিবদ্ধ হবে, যা মুছে ফেলা হবে না এবং পরিবর্তনও করা যাবে না।’ (তাফসিরে মাজহারী, খণ্ড- ৯, পৃষ্ঠা-২৮৩)।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) এ মর্মে হাদিস বর্ণনা করেছেন যে, যে সমস্ত লোক জুমার নামায থেকে দূরে থাকে (পড়ে না) তাদের সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আমার ইচ্ছা হয় যে আমি কাউকে নামায পড়ানোর আদেশ করি, সে মানুষকে নামায পড়াক। অতঃপর যে সমস্ত লোক জুমার নামায পড়ে না, আমি তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিই।’ (মুসলিম, হাদিস নং- ৬৫২)