শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ আজ প্রায় ২ বছর হয়ে গেল। কিন্তু এখনো আমরা শিক্ষার্থীরা স্কুল, কলেজ খোলার কোনো আশা দেখতে পারছিনা। হ্যাঁ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে একেক সময় একেক মন্ত্রীর বা বিভিন্ন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বক্তব্য শুনতে পাই। ভ্যাকসিনের স্টক শেষ হওয়ার পর শিক্ষামন্ত্রী গত মে মাসের ২৬ তারিখ বলেন, ১৩ জুন থেকে স্কুল-কলেজ খোলা হবে। তার ৩ দিন পর ৩০ মে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের করোনা পরিস্থিতি অনুকূল না থাকলে ১৩ জুন থেকে স্কুল-কলেজ খোলা হবে না।’ আবার শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ৫ শতাংশ বা তার কমে সংক্রমণের হার না নামা পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা স্বাস্থ্যসম্মত নয়। অন্যদিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সকল শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হবে।
তাদের এসব কথা শুনলে মনে হয় তারা নিজেরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা না করে যে যার মতো যখন ইচ্ছা বক্তব্য দিয়ে দেয়। আমরা শিক্ষার্থীরা তাদের কারো কথারই মিল পাচ্ছিনা। মাঝখানে ভুগতে হচ্ছে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের। একটা সময় ছিল যখন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। কিন্তু এটা এখন এমন এক পর্যায়ে এসে ঠেকেছে যেখানে আর মানা যাচ্ছে না। স্বয়ং তারাই এখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার জোর দাবি করছে।
আজ শিক্ষার্থীদের কি অবস্থা তাতো দেশের কারো অজানা নয়। শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া, তাদের করুণ অবস্থা কি দেশের দায়িত্বশীলদের চোখে পড়ছেনা। দেশের সবকিছু খোলা, সবকিছু পুনরায় চালু এমনকি বিনোদন কেন্দ্র পর্যন্ত খুলে দেওয়া হয়েছে। যেখানে শিক্ষার্থীরাই ঘোরাফেরা করতে যায়। তাহলে তাদেরকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে দিতে কি সমস্যা প্রশ্ন এখন প্রত্যেকটি মানুষের মনে। এটার মানেতো এটাই বুঝায় যে, কোনো জায়গায় করোনা নেই, শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই আছে।
এক সময় বলা হতো করোনা সংক্রমণের ধারা এখন অনেক বেশি একটু কমে আসলেই খুলে দেওয়া হবে। আবার বলা হলো করোনা সংক্রমণের হার ৫ শতাংশ বা তার কমে আসলেই খুলে দেওয়া হবে। এখন আবার শোনা যায় সকল শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার পরেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হবে। তাহলে কি ৫ শতাংশ না আসা পর্যন্ত খোলা হবে না? আর এই ৫ শতাংশ আসবে কবে? সকল শিক্ষার্থীদের টিকা না দেওয়া পর্যন্ত খেলা হবে না? তাহলে সকলকে টিকা দেওয়া শেষ হবে কবে? তাদের প্রত্যেকটি কথায় মনের ভেতর শুধু প্রশ্নই জাগে। কোনো সমাধান পাওয়া যায় না।
তাদের এসব কর্মকাণ্ড নিয়ে এখন আর কিছু বলার থাকে না। এসব দেখলে মনে হয় ছোট্ট বাচ্চাদের ওই খেলার মতো, ‘আমি যা কমু তাই, তাতে তোর কি রে?’ আর ছোট্ট বাচ্চাদের খেলার ছলে এই কথার মিল পাওয়া যায় বিখ্যাত ওই প্রবাদটির “জোর যার মুল্লুক তার”। এতো দিন ভাবতাম এই প্রবাদটি শুধুমাত্র কথার কথা। কিন্তু এখন আসলেই বুঝতে পারছি যে, প্রবাদটির বাস্তবতা রয়েছে। আর এই বাস্তবতা প্রমাণ হয় আমাদের মতো শিক্ষার্থীদেরকে এভাবে একের পর এক আশ্বাস দিয়ে তা ভেঙ্গে ফেলা।