গতকাল শুক্রবার (১১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর মধ্য বাড্ডা এলাকায় ‘সড়ক দুর্ঘটনার আলোকচিত্র প্রদর্শনী’ করেছেন শিক্ষার্থীরা। যতদিন নিরাপদ সড়কের দাবি বাস্তবায়িত না হবে ততদিন পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় এ ধরনের কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা করেন।
সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ ও ছবি দিয়ে প্ল্যাকার্ড বানান শিক্ষার্থীরা। তাদের হাতে দেখা যায় বাবা-দাদির পর হাবিবের মৃত্যুও সড়কে, শাহজাদপুরে বাসের ধাক্কায় মায়ের মৃত্যু, মেয়ে আহত, চোখের সামনে দুই বান্ধবীর মৃত্যু দেখে নির্বাক আরেক বান্ধবী, বাবার শ্রাদ্ধ শেষে ফেরার পথে লাশ হলেন পাঁচ ভাই, সড়কে বছরে মৃত্যু ৬২৮৪ সহ আরও বিভিন্ন লেখা ও ছবি।
খিলগাঁও মডেল কলেজের শিক্ষার্থী সোহাগী সামিয়া বলেন, সড়কে প্রতিনিয়ত আহত-নিহতের সংখ্যা বাড়ছে। প্রশাসনের গাফিলতি ও দায়িত্বহীনতার কারণেই সড়কে এমন দুর্ঘটনা ঘটছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে চালকদের বেপরোয়া মনোভাব সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। অন্য দিকে চালকদের কর্মঘণ্টা ঠিক করা ও বেতন নিশ্চিতে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। এ সময় তিনি প্রশ্ন তোলেন, আর কত মৃত্যু হলে সরকারের টনক নড়বে?
আজ নতুন নয় নিরাপদ সড়কের দাবিতে গত কয়েক বছরে একাধিকবার আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। এরপরও সড়ক দুর্ঘটনা থামেনি। নিরাপদ সড়ক নিয়ে কাজ করা সংগঠন রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৬ হাজার ২৮৪ জন। এর মধ্যে ৮০৩ জনই ছিলেন শিক্ষার্থী।
এদিকে নিরাপদ সড়কের দাবিতে গতকালের কর্মসূচিতে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা রাজধানীর মধ্য বাড্ডা এলাকার আলাতুন্নেসা উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে জড়ো হন। সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে প্রকাশিত সংবাদ ও আলোকচিত্রের পাশাপাশি তাঁদের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল ‘সড়কে আর কত মৃত্যুর মিছিল’, ‘সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাও’ ও ‘নিরাপদ সড়ক চাই’। শিক্ষার্থীরা সড়ক দুর্ঘটনাকে ‘কর্তৃপক্ষের অবহেলাজনিত হত্যাকাণ্ড’ বলেও উল্লেখ করেন।
কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা বলেন, সরকার তড়িঘড়ি করে গণপরিবহনে অর্ধেক ভাড়ার আংশিক দাবি মানার ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় কোনো বাসেই অর্ধেক ভাড়া নেওয়া হয় না। তাঁরা সরকারের উদ্দেশে প্রশ্ন করেন, ছুটির দিনে শিক্ষার্থীরা কি শিক্ষার্থী থাকে না। বিনা শর্তে সব গণপরিবহনে অর্ধেক ভাড়া কার্যকর করার দাবি জানান তাঁরা।
শিক্ষার্থীরা করোনা মহামারিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখারও সমালোচনা করেন। তাঁরা বলেন, বাণিজ্য মেলা হয়েছে, ১৫ তারিখ থেকে বইমেলাও হবে। আবার বলা হয়েছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বইমেলার সময় আরও বাড়তে পারে। তাহলে বই মেলায় কি কোনো শিক্ষার্থীরা যাবে না? মার্কেট, শপিংমলে লোকজন যাচ্ছে। সেগুলোতে করোনা নেই, সেখানে গেলে করোনা হবে না। শুধু স্কুল-কলেজে গেলেই করোনা হবে। করোনা কি শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই!