● শুক্রবার, এপ্রিল 26, 2024 | 03:40 পূর্বাহ্ন

পৃথিবীতে হত্যার প্রথম সূত্র

পৃথিবীতে হত্যার প্রথম সূত্র

হযরত আদম ও হাওয়া (আ.) যখন পৃথিবীতে আগমন করেন এবং তাদের সন্তান প্রজনন ও বংশ বিস্তার শুরু হয়, তখন তাদের জোড়া জোড়া (জময) সন্তান জন্মগ্রহণ করত। অর্থাৎ একসাথে একটি পুত্র ও একটি কন্যা। শুধুমাত্র হযরত শীস (আ.) একা ভূমিষ্ঠ হয়েছিলেন। তখন ভাই-বোন ছাড়া আদম (আ.) এর আর কোন সন্তান ছিল না। অথচ ভাই-বোন পরস্পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে না।

একই গর্ভ থেকে যে যমজ পুত্র ও কন্যা জন্মগ্রহণ করলে, তারা পরস্পর ভাই-বোন হিসেবে গণ্য হবে। তাদের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক হারাম। কিন্তু পরবর্তী গর্ভ থেকে জন্মগ্রহনকারী পুত্রের জন্য প্রথম গর্ভ থেকে জন্মগ্রহণকারীনি কন্যা সহোদরা ভাই-বোন হিসেবে গণ্য হবে না। তাদের মধ্যে পরস্পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া বৈধ। তাই মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা প্রয়োজনের খাতিরে আদম (আ.) এর শরীয়তে পরবর্তী গর্ভ থেকে জন্মগ্রহনকারী পুত্রের জন্য প্রথম গর্ভ থেকে জন্মগ্রহণকারীনি কন্যার বিয়ের নির্দেশ জারি করেন।

তাই সে সময় আদম (আ.) একটি জোড়ার ছেলের সাথে অন্য জোড়ার মেয়ের বিয়ে দিতেন। ঘটনাক্রমে কাবিলের সাথে যে সহোদরা জন্ম নিয়েছিল সে ছিল পরমা সুন্দরী নাম ছিল আকলিমা। কিন্তু হাবিলের সাথে যে সহোদরা জন্ম নিয়েছিল সে দেখতে অতটা সুন্দরী ছিল না। তার নাম ছিল লাওয়ায। বিবাহের সময় হলে শরয়ী নিয়মানুযায়ী হাবিলের সহোদর বোন কাবিলের জন্য নির্ধারণ করা হল। ফলে আদম (আ.) তৎকালীন শরীয়তের আইনের পরিপ্রেক্ষিতে কাবিলের আবদার প্রত্যাখ্যান করলেন এবং তাকে তার নির্দেশ মানতে বললেন। কিন্তু সে মানল না। পরে তাকে শাসন করলেন। তাতেও কোনো লাভ হলো না।

অবশেষে আদম (আ:) চিন্তা ভাবনা করে হাবিল ও কাবিলের মতভেদ দূর করার জন্য বললেন, ‘তোমরা উভয়েই আল্লাহর উদ্দেশ্যে কুরবানী পেশ কর। আল্লাহ তা’আলা যার কুরবানী কবুল করবেন, তার সাথেই আকলিমার বিয়ে হবে।’ সে সময় কুরবানী গৃহীত হওয়ার একটি সুস্পষ্ট নিদর্শন ছিল যে, আকাশ থেকে একটি অগ্নিশিখা এসে সে কুরবানীকে ভষ্মীভূত করে ফেলত। আর যার কুরবানী কবুল হতো না তারটা সেখানেই পড়ে থাকত।

যা-ই হোক, তাদের কুরবানীর পদ্ধতি সম্পর্কে যা জানা যায় তা হলো- কাবিল চাষীর কাজ করত। তাই তিনি গমের শীষ থেকে ভাল ভাল গুলো বের করে বাজে গুলোর একটি আটি কুরবানীর জন্য পেশ করল। আর হাবিল ছিল পশুপালনকারী। তাই সে তার জন্তুর মধ্যে থেকে সবচেয়ে ভালো একটি দুম্বা কুরবানীর জন্য পেশ করল। এরপর নিয়মানুযায়ী আকাশ থেকে একটি অগ্নিশিখা এসে হাবিলের কুরবানীটি ভষ্মীভুত করে দিল। আর কাবিলের কুরবানী যথাস্থানেই পড়ে থাকল। (ফতহুল ক্বাদীরের বর্ণনায় পাওয়া যায় যে, হাবিলের পেশকৃত দুম্বাটি জান্নাতে উঠিয়ে নেয়া হয় এবং তা জান্নাতে বিচরণ করতে থাকে। অবশেষে ইসমাঈল (আ:) কে ঐ দুম্বাটি পাঠিয়ে বাঁচিয়ে দেয়া হয়) ।

হাবিলের দেয়া কুরবানি আল্লাহর দরবারে গৃহীত হলো আর কাবিলেরটি হলো না। কিন্তু আসমানওয়ালার এ সিদ্ধান্ত কাবিল কিছুতেই মানতে পারল না। কাবিলের দুঃখ ও ক্ষোভ আরো বেড়ে গেল। সে আত্মসংবরণ করতে না পেরে প্রকাশ্যে তার ভাই হাবিলকে বলল, ‘আমি অবশ্যই তোমাকে হত্যা করব। হাবিল তখন ক্রোধের জবাবে ক্রোধ প্রদর্শন না করে একটি মার্জিত ও নীতিগত বাক্য উচ্চারণ করে বলেছিল, ‘তিনি মুত্তাক্বীর কর্মই গ্রহণ করেন। সুতরাং তুমি তাক্বওয়ার কর্মই গ্রহণ করো। তুমি তাক্বওয়া অবলম্বন করলে তোমার কুরবানীও আল্লাহর দরবারে গৃহীত হতো। কিন্তু তুমি তা করোনি, তাই তোমার কুরবানী প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। এতে আমার দোষ কোথায়? তবুও এক পর্যায়ে কাবিল ক্রোধে বশবর্তী হয়ে হাবিল কে হত্যা করল। (তাফসীর ইবনু কাসীর, দুররে মনসূর, ফতহুল বায়ান, ৩/৪৫ ও ফতহুল ক্বাদীর, ২/২৮-২৯)

এই সম্পর্কিত আরও

আবুল কালাম
বিস্তারিত...
 আরবে ঈদের তারিখ ঘোষণা
বিস্তারিত...
813788_175
বিস্তারিত...
রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান
বিস্তারিত...
জান্নাতের ফুল
বিস্তারিত...
কাজী নজরুল ইসলাম
বিস্তারিত...