বাংলাদেশ ছোট্ট একটি দেশ। এর তিন দিক প্রতিবেশী দেশ ভারত ও মায়ানমারের স্থলভাগ দ্বারা বেষ্টিত। তবে বাকি এক দিক বিশাল সমুদ্র- বঙ্গোপসাগর। দেশের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে এর ভূমিকা অনস্বীকার্য। দেশের মৎস্য চাহিদার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ পূরণ করে এটি। ব্যবসায়িক কাজেও এর ভূমিকা অপরিসীম। কিন্তু সেই বঙ্গোপসাগর নিয়ে আমাদের পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বেশ উদ্বিগ্ন। কারণ বঙ্গোপসাগরের মাছ মাঝে মাঝে মরে ভেসে উঠছে। অনেক সময় দেখা যায়, গভীর সমুদ্র থেকে বড় বড় আকারের মাছ সমুদ্র উপকূলে চলে আসে। এই সমুদ্রের পানি এত বেশী দূষিত হয়ে পড়েছে যে, সামুদ্রিক মাছগুলো আর তাদের প্রাণ রক্ষা করতে পারছে না। এ অবস্থার কারণে অনুসন্ধান করতে গেলে দেখা যায়, সমুদ্রে যেসব জাহাজ, কার্গো, ও অন্যান্য যানবাহন চলাচল করে, তা তাদের দূষিত বর্জ্য নির্দ্বিধায় সমুদ্রের পানিতে ফেলে দিচ্ছে। তাছাড়া সারা দেশের নদী-নালার পাশে গড়ে ওঠা শিল্পের বর্জ্য নদীবাহিত হয়ে শেষে সমুদ্রে গিয়ে পড়েছে। এছাড়া বিভিন্ন দেশ তাদের শিল্প ও নানা বর্জ্য জাহাজ বোঝাই করে সমুদ্রে এনে ফেলছে। এর ফলে সমুদ্রে পানি দূষিত হচ্ছে মারাত্মক ভাবে। ১৯৮৯ সালে সাইপ্রাসের পতাকাবাহী একটি জাহাজ কক্সবাজারের উপকূলে অপরিশোধিত তেল সমুদ্রে ফেলে দেয়। এছাড়া ১৯৯২-এ খুলনা উপকূলে এ ধরনের আরো একটি ঘটনা ঘটে। সেখানে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে দূষিত তেলের কারণে পানিদূষণ ঘটে। এর ফলে সমুদ্রের মাছ মরে ভেসে ওঠে। সবচেয়ে ভয়াবহ দূষণটি ঘটে ১৯৯৮ সালে। বিষাক্ত পারমাণবিক একটি জাহাজ বঙ্গোপসাগরে বর্জ্য ফেলে বিনা বাঁধায় চলে যায়। পৃথিবীর অন্য কোথাও বর্জ্য ফেলতে না পেরে এটি নিরাপত্তা বাহিনীর চোখকে ফাঁকি দিয়ে বঙ্গোপসাগরে বর্জ্য ফেলার কাজটি সেরে ফেলে। পরিবেশ বিজ্ঞানীদের ধারণা, এ ধরনের বিভিন্ন কারণে আমাদের সমুদ্রের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে মাছগুলো গভীর সমুদ্রে টিকে থাকতে না পেরে উপকূলে বা নদীর মোহনায় এস ভিড় জমাচ্ছে। তাছাড়া এই দূষিত পানিতে বেড়ে ওঠা মাছ জনস্বাস্থ্যের জন্যও মারাত্মক হুমকি স্বরূপ।তাই বঙ্গোপসাগরের পরিবেশ রক্ষায় সরকারকে এখন যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় অদূর ভবিষ্যতে উপকূলবর্তী অঞ্চলে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। তাই আমাদের নিজেদের স্বার্থেই বঙ্গোপসাগরের পরিবেশকে রক্ষা করতে হবে।