তনুশ্রী দাশের কলেজ ব্যাগে নিজের বই–খাতা তার পাশাপাশি ছেলের ডায়াপার, পানি, খাবারসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও থাকে। তনুশ্রী বলেন, কলেজে যাওয়ার সময় নিজের বই–খাতার চেয়ে তাঁর আট মাস বয়সী ছেলের জিনিসপত্রই বেশি সঙ্গে নিয়ে যেতে হয়।
তনুশ্রী দাশ রাজধানী বাড্ডার মহানগর মহাবিদ্যালয় (ডিগ্রী)-এর ২০২১ বর্ষের এইচএসসি পরীক্ষার্থী। আগামী ডিসেম্বরের ২ তারিখ তাঁর এইচএসসি পরীক্ষা। ২০১৯ সালে ১৯ বছর বয়সে বিয়ে করেন পরীক্ষার্থী তনুশ্রী। তাঁর ছেলে আবেগের বয়স এখন আট মাস।
তনুশ্রী জানান, ছোটবেলায় তাঁর কিছু শারীরিক জটিলতার কারণে পড়াশোনায় কিছুটা ‘গ্যাপ’ পড়ে যায়। নিজের পছন্দের পাত্রের সাথে পারিবারিকভাবে তাঁর বিয়ে হয়। করোনার কারণে গত দেড় বছর কলেজ বন্ধ ছিল। সেপ্টেম্বরের ১২ তারিখ থেকে কলেজ খোলা হয়। সকল স্বাস্থ্যবিধি মেনে ছেলেকে সঙ্গে নিয়েই কলেজে যান তিনি। কলেজের সকল শিক্ষক, কর্মচারী এবং বন্ধুরা তাঁকে বিভিন্নভাবে সহায়তা করেন।
তনুশ্রী ফেসবুকের একটি গ্রুপে তাঁর ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে কলেজে যাওয়ার একটি ছবি পোস্ট করেছিলেন। এই ছবি দেখে অনেকেই তাঁকে শুভেচ্ছা জানান। তাঁর প্রশংসা করেন।
তনুশ্রী বলেন, যেদিন কলেজে যাই, সেদিন ভোর পাঁচটায় ঘুম থেকে উঠি। ঘরের কাজকর্ম শেষ করি। ছেলেকে নিয়ে কলেজে যাওয়ার প্রস্তুতি নিই। নাশতা ব্যাগে করে নিয়ে যাই। কলেজে গিয়ে নাশতা করি। কলেজ শেষে বাসায় ফিরে সবার আগে ছেলেকে গোসল করাই, খাওয়াই, ঘুম পাড়াই। তারপর রান্নাসহ ঘরের কাজ করি। সামনেই পরীক্ষা। তাই কাজের ফাঁকে ফাঁকে পড়ালেখা করি।’
তনুশ্রীর মতে, অনেকে মনে করেন, বিয়ে করা মানেই মেয়েদের পড়ালেখা বা তার ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যায়। কিন্তু তিনি তেমনটা মনে করেন না। ঘর সংসার সামলানোর পাশাপাশি ছেলেকে লালন–পালন করেই তাঁর পড়াশোনা শেষ করতে পারবেন বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন তিনি। পড়াশোনা শেষ করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চান তনুশ্রী।
তনুশ্রী বলেন, ‘ঘর সংসার, ছেলে—সবকিছু ঠিক রেখে আমি জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে চাই।’ তনুশ্রী তাঁর কলেজের শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তবে যুক্তিবিদ্যার প্রভাষক সাবিহা বেগমের নামটা তিনি একটু বেশি করেই উল্লেখ করলেন। জানালেন, এই শিক্ষক তাঁকে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করছেন। উৎসাহ দিচ্ছেন।
প্রভাষক সাবিহা বেগম বলেন, ‘পড়াশোনার প্রতি তনুশ্রীর খুবই আগ্রহ। ছেলেকে নিয়ে পড়াশোনা করতে পারবে কি না, তা নিয়ে সে খুব চিন্তিত ছিল। ছেলেকে বাসায় কারও কাছে রেখে আসবে, তার কাছে সেই সুযোগও নেই। আমি তনুশ্রীকে আমার নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা বলেছি। আমারও কম বয়সে বিয়ে হয়েছিল। শ্বশুরবাড়ির বড় সংসারের সব দায়িত্ব পালন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করেছি। তনুশ্রীকে বলেছি, নিজে কিছু করতে চাইলে পড়াশোনা করতেই হবে। অন্যদের চেয়ে তাঁকে একটু বেশি পরিশ্রম করতে হবে, এই যা।’