আজ শেষ হতে চলেছে ‘ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা- ২০২২’। কিন্তু সেই মেলায় বাণিজ্যের চেয়ে মেলা মেলা ভাব-ই ছিল বেশী লক্ষণীয়। আবার ক্রেতা-দর্শণার্থীদের দুর্ভোগ ও আশানুরূপ পণ্য না পাওয়ার আক্ষেপ নিয়েই আজকের প্রতিবেদন।
হঠাৎ করে করোনার ‘ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে’ এর প্রকোপ বেড়ে যাওয়া এবার আর বাড়ানো হচ্ছে না চলমান বাণিজ্য মেলার সময়সূচি। এ ব্যাপারে মেলার আয়োজক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) কর্মকর্তারা জানান, মেলায় অংশ নেওয়া ব্যবসায়ী ও গেট ইজারাদার প্রতিষ্ঠানও সময় বাড়ানোর কোনো আনুষ্ঠানিক আবেদন জানায়নি। তা ছাড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে মেলার সময় বাড়ানোর কোনো নির্দেশনাও আসেনি, তাই মেলার সময়সীমা বাড়ছে না।
কিন্তু মাসব্যাপী চলমান এ মেলার আয়োজন-ই কেমন ছিল বা মেলায় কেনাবেচা করতে পেরে কতটা সন্তুষ্ট ক্রেতা-বিক্রেতারা তা নিয়ে মনে একটা প্রশ্ন থেকেই যায়। এবার মেলায় ক্রেতার চেয়ে দর্শনার্থী বেশি লক্ষ্য করা গেছে, যার ফলে হয়তো আশানুরূপ বেচা-বিক্রি হয়নি বিক্রেতাদের।
মেলায় আসা অনেক দর্শনার্থীদের অভিযোগ রাস্তায় প্রচুর ধুলাবালির কারণে তাদের রীতিমতোই আসতে প্রচুর দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। অনেকে ধুলাময় রাস্তা দিয়ে আসতে গিয়ে অস্বস্তি বোধ করছেন। মেলায় আসা এক দর্শনার্থঅ বলেন, “আসার পথে অনেক বেশি ধুলাবালু সহ্য করতে হয়েছে, এ রকম জানলে আসতাম না।” এর উপর আবার পরিবহন সংকটে ও যানজটের কারণে অনেকে যাত্রাপথেই অতিবাহিত করেছেন ৩-৪ ঘন্টা। এত সময় ধরে পরিবহনে বসে থেকে যখন মেলায় পৌছেছেন তখন আর ঘোরাঘুরি করার আগ্রহ পাননি ক্রেতা-দর্শনার্থীরা। আবার মেলা থেকে ফেরার সময় সন্ধ্যাবেলা বাসের সংখ্যা কম থাকায় পড়তে হয় আরেক ভোগান্তিতে।
এবার মেলায় হাজার মানুষের সমাগমে মাত্র এক-দুইশো ক্রেতা চোখে পড়ার মতো। অন্য সবাই সাধারণ দর্শনার্থী, এসেছেন ঘুরে ঘুরে ছবি তুলতে। মেলার প্রধান গেইট দিয়ে ঢুকে হাজার হাজার মানুষ লক্ষ্য করা গেলেও মূল প্যাভিলিয়নের ভিতরে ঢুকে দেখা যায়নি তেমন ভিড়। ছুটির দিনে মোটামুটি ক্রেতা সমাগমে কিছুটা স্বস্তি পেয়েছিলেন বিক্রেতারা। কিন্তু পরের দিনই ধাক্কা খেতে হয় ক্রেতার অভাবে।
বাণিজ্য মেলার পেছনের গেট দিয়ে প্রবেশ করে প্রাণের স্টলে গিয়ে দেখা গেল ক্রেতার তেমন ভিড় নেই। এরপর আরও কিছু খাবারের দোকানগুলোতেও একই চিত্র দেখা যায়। প্রায় প্রত্যেকবারই আসবাবের বেশ চাহিদা থাকে বাণিজ্য মেলায়। কিন্তু এবার আসবাবের দোকানগুলোতে গিয়ে দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। বেচাকেনা একদম কম। নাভানা ফার্নিচারের বিক্রয়কর্মী জানান, সবচেয়ে বেশি দর্শনার্থী আশপাশের গ্রামের এবং ক্রেতা সাধারণত আসে রাজধানী ঢাকা থেকে। কিন্তু এবার ক্রেতার চেয়ে দর্শনার্থীদের সমাগম বেশী হওয়ায় বেচাকেনা পূর্ববর্তী বছরগুলোর অর্ধেক ও হয়নি। এর উপর প্যাভিলিয়ন স্টল না দেওয়ায় সোফা, খাট, ডাইনিং টেবিলসহ আসবাবপত্রসমূহ মনের মতো করে সাজানো সম্ভবপর হয়ে উঠছে না।
অন্যদিকে ইলেকট্রনিক্সের দোকানগুলোতে মোটামুটি ভিড় হলেও নিজেদের পছন্দসই জিনিস না পেয়ে হতাশ ক্রেতারাও। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় জিনিস পছন্দ হলেও দাম হাঁকা হচ্ছে খুব বেশী।
মেলায় ক্রেতার চেয়ে দর্শনার্থী বেশী হওয়ায় যেমন বিপাকে পড়েছেন বিক্রেতারা, তেমনই অনেক ক্রেতা বিপাকে পড়েছেন নিজেদের পছন্দমতো জিনিস কিনতে না পেরে। যেসব জিনিস একটু আকর্ষণীয় সকলের দৃষ্টি সেদিকটাই কাড়ছে আবার তার দাম ও হাঁকা হচ্ছে প্রচুর। বেডশীটের দোকানে এক দর্শনার্থী জানান, “মেলায় এসছিলাম ঘুরতে কিন্তু বেডশীট দেখে ভালো লাগায় এদিকটায় এলাম। সাধারণ শপিংমলে যেই বেডশীট ৫০০-৬০০ টাকায় কিনতে পাওয়া যায় এখানে তার দাম চাওয়া হচ্ছে ১৩শ-১৫শ টাকা পর্যন্ত।” তাদের ধারণা, বেচাকেনা কম হওয়ায় এ লাগামহীন দাম চাওয়া বিক্রেতাদের।
তবে শেষ সময়ে বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, শুরুতে বিক্রি কম থাকলেও শেষের দিকে বেড়েছে কিন্তু প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। আগে তেমন ছাড় না দিলেও শেষ সময় হওয়ায় এখন নানা ছাড় দেওয়া হচ্ছে। আমাদের ব্যবসা তেমন ভালো হয় নি। আবার খারাপও হয় নি। মোটামুটি ব্যবসা করেছি।
শেষ সময়ে ঘুরতে এসে দর্শনার্থীরা বলছেন, মেলা যেহেতু শেষ প্রায় তাই শেষ সময় ঘুরতে আসলাম। কিছু কেনাকাটা করবো ভাবছি। মেলার জায়গাটি সুন্দর হলেও বেশ দূরে। আগের জায়গাতেই মেলা থাকলে ক্রেতা-দর্শনার্থী ও বিক্রেতা উভয়ের মুখে হাসি থাকতো বলে ভাবছেন অনেকে।
কিছু হতাশা ও স্বস্তি সব মিলিয়ে ব্যবসায়ীদের প্রাণের এ মেলা শেষ হবে আজ ৩১শে জানুয়ারী (সোমবার) রাত ৯টায়।