মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পেটে ব্যথা নিয়ে ভর্তি হয় সুমি বেগম (২৪) নামের এক রোগী। কিন্তু সেখানেই তার মৃত্যু হয়। নার্সদের অবহেলার কারণে তার মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেন স্বজনরা। সুমি উপজেলার মুন্সিবাজার ইউনিয়নের ধর্মপুর গ্রামের মন্নান মিয়ার মেয়ে। ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল বৃহস্পতিবার (১ লা জুলাই) বিকাল ৫ টার দিকে।
গৃহবধূ সুমির যখন মৃত্যুর হয় তখন তার দুগ্ধপোষ্য ১০ মাসের শিশুটি সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এ সময় ১০ মাসের অবুঝ শিশুটিকে মৃত মায়ের বুকের ওপর মাথা রেখে অঝোরে কান্না করতে দেখা যায়। তার কান্না ও চিৎকারে পুরো হাসপাতাল চত্বর ভারী হয়ে উঠে। সৃষ্টি হয় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যে। এই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়েছে।
নিহতের বাবা মন্নান মিয়া ও মা রাহেনা বেগম অভিযোগ করে বলেন, বুধবার (৩০ জুন) দুপুরে সুমী বেগমের পেটব্যথা দেখা দিলে তাকে কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করানো হয়। বৃহস্পতিবার সকালে তার মেডিকেল টেস্ট শেষ করে হাসপাতালে সাধারণ মহিলা ওয়ার্ডে নিয়ে আসেন। সেখানে আসার পর তার অবস্থার অবনতি হতে থাকে। তা দেখে মা রাহেনা বেগম ও বাবা মন্নান মিয়া ডিউটিরত ডাক্তার ও সিনিয়র নার্সদের কাছে উন্নত চিকিৎসার জন্য মৌলভীবাজার নিয়ে যেতে তাগাদা দিলেও তারা তাতে কর্ণপাত করেনি।
পরে দুপুর ১২টার সময় তার অবস্থার আরও অবনতি হলে সিনিয়র নার্স অনিতা সিনহা ও মিডওয়াই রত্না মণ্ডল তাকে একটি ইনজেকশন পুশ করেন। এরপর থেকেই সুমি আর কোনো নড়াচড়া করেন না। সুমির মা-বাবার সন্দেহ হওয়ায় ডিউটি ডাক্তার মুন্না সিনহা ও নার্সদের অবহিত করলে তারা বিরক্তির স্বরে রোগী ঘুমিয়ে আছেন, ডিস্টার্ব করবেন না বলে জানান। বিকালেও রোগী নড়াচড়া করছে না দেখতে পেয়ে নার্সকে জানালে নার্সরা ডাক্তার মুন্না সিনহাকে নিয়ে আসেন। তিনি সুমিকে মৃত ঘোষণা করেন।
সুমির মৃত্যুর জন্য হাসপাতালের নার্স এবং ডিউটি ডাক্তারই দায়ী বলে অভিযোগ করেন সুমির মা রাহেনা বেগম। কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সাজেদুল কবির ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এ বিষয়ে যদি হাসপাতালের কেউ দায়ী থাকে তাহলে শুক্রবার তদন্তক্রমে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে মায়ের মৃত্যুর পর ১০ মাসের অবুঝ শিশুটি মায়ের বুকের ওপর মাথা রেখে অঝোরে কান্না করতে থাকেন। শিশুটির এই কান্না দেখে সকলের হৃদয় নাড়া দিয়ে ওঠে। একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর যে-ই দেখেছে শিশুটির জন্য তার কান্না চলে এসেছে।