● মঙ্গলবার, এপ্রিল 23, 2024 | 02:28 অপরাহ্ন

মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বিবাহের বিধান

আজকাল অনেক স্থানেই দেখা যায়, মোবাইল-ফোন ও ভিডিওকলের মাধ্যমে প্রবাসীদের সাথে বিবাহ বন্ধন হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে সঠিক মাসআলা ও নিয়মপদ্ধতি না জানা থাকায় , অধিকাংশ বিবাহই সহীহ-শুদ্ধভাবে হয় না। এজন্য দূরে অবস্থিত কারো সঙ্গে বিবাহ দেয়ার ক্ষেত্রে আমাদের শরয়ী কিছু নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে।

বিবাহ সহীহ হওয়ার জন্য মৌলিকভাবে ৩টি শর্ত রয়েছে, যার কোনো একটি না থাকলে বিবাহ সহীহ হয় না। শর্তগুলো হলো:

১. ইজাব-কবুল (বিাহের প্রস্তাব ও তা গ্রহণ) একই মজলিসে (বৈঠকে) হতে হবে, ভিন্ন মজলিসে হলে হবে না।

২. বর-কনে বা তাদের প্রতিনিধির ইজাব-কবুল দু’জন যোগ্য সাক্ষীর সামনে সম্পাদন হওয়া। ইজাব যেসব সাক্ষীর সামনে হবে কবুলও ঠিক সেসব সাক্ষীদের সামনেই হতে হবে।

৩. ইজাব-কবুলের সময় সাক্ষীদ্বয়কে স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে একইসাথে তা শুনতে হবে। স্বশরীরে উপস্থিত না হলে বা দু’জন ভিন্ন ভিন্নভাবে শুনলে তা শরয়ী সাক্ষ্য বলে বিবেচিত হবে না।

সুতরাং মোবাইলের একপ্রান্তে যদি বর বা তার উকীল আর অন্য প্রান্তে কনে বা তার উকীল থাকে তাহলে লাউড স্পীকারের মাধ্যমে ইজাব-কবুল হলেও শরীয়তের দৃষ্টিতে বিবাহ শুদ্ধ হবে না। তেমনি কম্পিউটার বা মোবাইলে ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে যদি দু’জন দু’প্রান্ত থেকে একে অপরকে সুষ্পষ্ট দেখতে পায় আর উভয় মজলিসে সাক্ষীগণও উপস্থিত থাকে তাহলেও বিবাহ শুদ্ধ হবে না। যেহেতু বিবাহ সহীহ হওয়ার জন্য বর-কনে বা তাদের প্রতিনিধির একই মজলিসে উপস্থিত থাকা ও তাদের ইজাব-কবুল সাক্ষীদ্বয় সরাসরি একসাথে শোনা শর্ত ছিলো, যা এক্ষেত্রে অনুপস্থিত তাই এভাবে বিবাহ সহীহ হওয়ার কোনো অবকাশ নেই।

অবশ্য চিঠি, মোবাইল বা ইন্টারনেটের মাধমে দূরে থেকে বিবাহ করার একান্ত প্রয়োজন হলে নিম্নোক্ত পদ্ধতির যে কোনো একটি অনুসরণ করা যেতে পারে।

এক. বর বিবাহের প্রস্তাব দিয়ে কনেকে বা কনের নিযুক্ত উকীলকে চিঠি লিখবে। চিঠি কনের বা কনের নিযুক্ত উকীলের হস্তগত হলে শরীয়তসম্মত সাক্ষীদের সামনে ওই চিঠি পাঠ করা হবে। পাঠ শেষে কনে বা কনের নিযুক্ত উকীল ওই মজলিসেই বলবে যে, আমি বা কনের পক্ষে আমি বিবাহ কবুল করলাম। তাহলে বিবাহ সম্পন্ন হয়ে যাবে।

দুই. কনে বিবাহের প্রস্তাব দিয়ে বরকে বা বরের নিযুক্ত উকীলকে চিঠি লিখবে। চিঠি বরের বা বরের নিযুক্ত উকীলের হস্তগত হলে শরীয়তসম্মত সাক্ষীদের সামনে ওই চিঠি পাঠ করা হবে। পাঠ শেষে বর বা বরের নিযুক্ত উকীল ওই মজলিসেই বলবে যে, আমি বা বরের পক্ষে আমি বিবাহ কবুল করলাম। তাহলে বিবাহ সম্পন্ন হয়ে যাবে।

তিন. চিঠি বা মোবাইল-ফোনের মাধ্যমে বর বা কনে কাউকে নিজের বিবাহের জন্য উকীল নিযুক্ত করবে। উকীল সরাসরি বিবাহের মজলিসে উপস্থিত হয়ে শরীয়তসম্মত সাক্ষীদের সামনে নিজ মুআক্কিলের পক্ষ থেকে ইজাব-কবুলের মাধ্যমে বিবাহ সম্পাদন করে দিবে।

চার. চিঠি বা মোবাইল-ফোনের মাধ্যমে অন্য কাউকে উকীল নিযুক্ত না করে বরং বর কনেকে বা কনে বরকে নিজের বিবাহের জন্য উকীল নিযুক্ত করবে। তখন উকীল বর হোক বা কনে শরীয়তসম্মত সাক্ষীদের সামনে বলবে, তোমরা সাক্ষী থাকো, আমি আমার মুআক্কিল অমুকের বিবাহ আমার সঙ্গে সম্পাদন করলাম। তাহলে বিবাহ সম্পাদন হয়ে যাবে।

সর্বোপরি বিবাহ হলো, শরীয়ত ও সামাজিকভাবে স্বীকৃত পবিত্র এক বন্ধন, যার মাধ্যমে শুধু স্বামী-স্ত্রীর মাঝেই নয়; বরং উভয়ের পরিবারের মাঝে এক সেতুবন্ধনের পথ তৈরি হয়। পরিবারের মধ্যে আনন্দঘন এক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। উপস্থিত সকলে বর-কনের সুখের জন্য দুআ করে। কিন্তু মোবাইল-ফোনে বিবাহ হলে সে আনন্দ আর থাকে না। তাছাড়া এতে মসজিদে বিবাহ হওয়া, বিবাহ পরবর্তী খুতবা পাঠ করাসহ অনেক সুন্নাত আমলগুলোও পালন করা সম্ভবপর হয় না। তাই বর্তমান প্রচলিত পদ্ধতিতে মোবাইলে বিবাহ করা শরীয়া নিয়মের পরিপন্থী হওয়ার পাশাপাশি সামাজিক ও সুস্থ জীবনব্যবস্থার চাহিদা পরিপন্থীও বটে। সুতরাং আমাদের এ প্রচলিত পদ্ধতি বর্জন করে অবশ্যই সহীহ পদ্ধতিতে বিবাহ করা আবশ্যক। অন্যথায় সারাজীবন যিনা-ব্যাভিচাওে লিপ্ত থাকার প্রবল আশংকা বিদ্যমান থেকে যাবে। আল্লাহ আমাদের হেফাযত করুন।

** হেদায়া : ৩/১১৭, প্রকাশনী : দারু ইহইয়াইত তুরাসিল আরাবিয়্যি, বৈরূত।

** বাদায়েউস সানায়ে : ২/২৩১, প্রকাশনী : দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যা, বৈরূত।

** আল ফাতাওয়াল হিন্দিয়া : ১/২৬৮, প্রকাশনী : দারুল ফিকর, বৈরূত।

** আদ্দুররুল মুখতার মাআ রদ্দিল মুহতার : ৩/১৪, প্রকাশনী : দারুল ফিকর, বৈরূত।

** রদ্দুল মুহতার : ৩/১৪, প্রকাশনী : দারুল ফিকর, বৈরূত

** ফাতাওয়ায়ে উসমানী : ২/৩০৪, প্রকাশনী : মাকতাবাতু মাআরিফিল কুরআন, করাচী

(وَمِنْهَاسَمَاعُ الشَّاهِدَيْنِ كَلَامَهُمَا مَعًا……… وَلَوْ سَمِعَا كَلَامَ أَحَدِهِمَا دُونَ الْآخَرِ أَوْ سَمِعَ َحَدُهُمَا كَلَامَ أَحَدِهِمَا وَالْآخَرُ كَلَامَ الْآخَرِ لَا يَجُوزُ النِّكَاحُ هَكَذَا فِي الْبَدَائِعِ.

(دار الفكر, بيروت) : ১/২৬৮  الفتاوى الهندية

(قَوْلُهُ: اتِّحَادُ الْمَجْلِسِ) قَالَ فِي الْبَحْرِ: فَلَوْ اخْتَلَفَ الْمَجْلِسُ لَمْ يَنْعَقِدْ…………… (قَوْلُهُ: لَوْ حَاضِرِينَ) احْتَرَزَ بِهِ عَنْ كِتَابَةِ الْغَائِبِ لِمَا فِي الْبَحْرِ عَنْ الْمُحِيطِ الْفَرْقُ بَيْنَ الْكِتَابِ وَالْخِطَابِ أَنَّ فِي الْخِطَابِ لَوْ قَالَ: قَبِلْت فِي مَجْلِسٍ آخَرَ لَمْ يَجُزْ وَفِي الْكِتَابِ يَجُوزُ؛ لِأَنَّ الْكَلَامَ كَمَا وُجِدَ تَلَاشَى فَلَمْ يَتَّصِلْ الْإِيجَابُ بِالْقَبُولِ فِي مَجْلِسٍ آخَرَ فَأَمَّا الْكِتَابُ فَقَائِمٌ فِي مَجْلِسٍ آخَرَ، وَقِرَاءَتُهُ بِمَنْزِلَةِ خِطَابِ الْحَاضِرِ فَاتَّصَلَ الْإِيجَابُ بِالْقَبُولِ فَصَحَّ. اهـ.

رد المحتار: ৩/১৪, (دار الفكر, بيروت)

এই সম্পর্কিত আরও

আবুল কালাম
বিস্তারিত...
 আরবে ঈদের তারিখ ঘোষণা
বিস্তারিত...
813788_175
বিস্তারিত...
রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান
বিস্তারিত...
জান্নাতের ফুল
বিস্তারিত...
কাজী নজরুল ইসলাম
বিস্তারিত...