হিজাব পরিধান করে বিদ্যালয়ে আসার কারণে শিক্ষার্থীকে বেত্রাঘাত করার অভিযোগ উঠেছে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জ বৌদ্ধ (জেবি) উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। শিক্ষার্থীকে বেত্রাঘাতক করে তার হিজাব খুলে নেওয়ার ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন ওই শিক্ষার্থী। এদিকে বিদ্যালয়ে হিজাব নিষিদ্ধের ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকরা।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার সকালে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী লামিয়া বিনতিহাসহ আরও তিন শিক্ষার্থী হিজাব পরে বিদ্যালয়ে আসে। সকাল ১১টার দিকে অ্যাসেম্বলি শেষে ক্লাস শুরুর আগে প্রধান শিক্ষক তুষার কান্তি বড়ুয়া তাদের ডেকে হিজাব খুলে ফেলতে বলেন। অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী বিনতিহা হিজাব খুলতে না চাওয়ার কারণে তাকে প্রধান শিক্ষক বেত্রাঘাত করেন।
ঘটনাটি মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ছড়িয়ে পড়লে ক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী ও বিনতিহার অভিভাবকরা স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে নালিশ করেন। এতে কোনো প্রতিকার না পেয়ে বিনতিহা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
এ বিষয়ে লামিয়া বিনতিহার চাচা মোহাম্মদ মহিব বিল্লাহ বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক তুষার কান্তি বড়ুয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি আমাদের প্রথম বলেন, ‘স্কুলের ভেতর হিজাব পড়া যাবে না। নোটিশ বোর্ডে টানানো বিদ্যালয়ের ভেতর হিজাব নিষিদ্ধ হওয়ার একটি নোটিশ আমাদের দেখানো হয়।’ পরে আমার ভাতিজিকে ওই স্কুল থেকে অন্য স্কুলে নিয়ে যেতে উনার (প্রধান শিক্ষক) কাছে ট্রান্সফার সার্টিফিকেট চাই। এসময় তিনি কিছুটা নমনিয় হয়ে বলেন, ‘আচ্ছা বিনতিহা চলতি শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত হিজাব পড়লে অসুবিধে নেই। তবে আগামী বর্ষে আর পারবে না।’
অবশ্য হিজাবের জন্য শিক্ষার্থীকে বেত্রাঘাতের কথা অস্বীকার করে জোরারগঞ্জ বৌদ্ধ উচ্চ বিদ্যালয়ের (জেবি) প্রধান শিক্ষক তুষার কান্তি বড়ুয়া বলেন, ‘আমি মেয়েদের হিজাব নিষিদ্ধ করিনি। তারা বাড়ি থেকে স্কুল পর্যন্ত হিজাব পরিধান করতে পারবে, তবে স্কুলে ঢুকলে হিজাব খুলে ক্লাস করতে হবে।’ তিনি দাবি করেন, ‘হিজাবের জন্য আমি কোনো শিক্ষার্থীকে মারধর করিনি। তবে তাদের আমি বলেছি, ‘তোমরা স্কুলের ড্রেসকোড ফলো করবে। বাড়ি থেকে হিজাব পড়ে আসলেও স্কুলে স্কার্ট পড়বে।’
লামিয়া বিনতিহা’র আরেক চাচা মোহাম্মদ তুষার বলেন, ইসলামে নারীর পর্দা করা ফরজ। শিক্ষার্থীরা যদি হিজাব পড়ে বিদ্যালয়ে আসেন এটা তাদের স্বাধীনতা। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উচিত মুসলিম শিক্ষার্থীদের হিজাব পড়ে আসলে ও ফুল হাতার ড্রেস পড়লে তাদের স্বাধীনতা দেয়া। আমার ভাতিজিসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী হিজাব পড়ায় প্রধাণ শিক্ষক তাদের বেত্রাঘাত ও শারিরীকভাবে লাঞ্চিত করেছে। এঘটনায় প্রতিকার চেয়ে আমরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।’
মিরসরাই উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির খান বলেন, ‘জোরারগঞ্জ বৌদ্ধ উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের হিজাব পড়তে বাধা দেওয়ার বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। ছাত্রীরা যদি হিজাব পড়তে চায় তাহলে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ ক্ষেত্রে বাধা দেওয়ার সুযোগ নেই। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’