জিঞ্জিরা প্রাসাদ ঢাকার ঐতিহাসিক একটি স্থাপনা। এই প্রাসাদ বুড়িগঙ্গার অপর প্রান্তে কেরানীগঞ্জে অবস্থিত। ৪০০ বছর আগের তৈরি এ স্থাপনাটি এখনো টিকে আছে! ১৬২০ সালে বাংলার মোঘল সুবেদার দ্বিতীয় ইব্রাহিম খাঁ প্রমোদকেন্দ্র হিসেবে এটি নির্মাণ করেছিলেন।
এক সময় এখানে সমারোহ ছিল নারিকেল-সুপারি, আম-কাঁঠালসহ দেশীয় নানা প্রজাতির বৃক্ষের। বর্তমানে নাগরিক স্থাপনার ভিড়ে মূল ভবনটি খুঁজে পাওয়াই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। কেরানীগঞ্জের কদমতলী চৌরাস্তা থেকে খানিকটা পথ পার হলেই জিঞ্জিরা প্রাসাদের দেখা মিলবে। জিঞ্জিরা শব্দের অর্থ উপদ্বীপ। প্রাসাদটি নদী দ্বারা পরিবেষ্টিত হওয়ার কারণেই এই নামকরণ করা হয়েছিল।
সোয়ারী ঘাট থেকে প্রাসাদে সরাসরি যাতায়াতের জন্য বুড়িগঙ্গা নদীর ওপর কাঠের সেতু নির্মাণ করা হয়েছিল। জনশ্রুতি আছে, লালবাগ কেল্লা থেকে জিঞ্জিরা প্রাসাদ অবধি চলাচলের জন্য একটি সুড়ঙ্গপথ ছিল। মুর্শিদ কুলি খান, হোসেন কুলি খান ও আরো অনেকে এ প্রাসাদে বসবাস করেছেন। এ প্রাসাদে বন্দি ছিলেন নবাব সরফরাজ খান ও তাঁর পরিবার। মুর্শিদাবাদে হোসেন কুলি খান মারা গেলে তাঁর পরিবারকেও এই প্রাসাদে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়।
সবচেয়ে হৃদয়বিদারক ঘটনা হলো—নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয় হলে এই প্রাসাদে তাঁর মা আমিনা বেগম, খালা ঘষেটি বেগম, স্ত্রী লুত্ফুন্নেসা বেগম ও কন্যা উম্মে জোহরাকে বন্দি করে রাখা হয়েছিল।
কথিত আছে, মীরজাফরের পুত্র মিরনের নির্দেশ অনুযায়ী জমাদার বকর খান মুর্শিদাবাদে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে ঘষেটি বেগম ও আমেনা বেগমকে ধলেশ্বরী নদীতে নৌকা থেকে ফেলে ডুবিয়ে হত্যা করে। বর্তমানে প্রসাদটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সংরক্ষিত পুরাকীর্তি।