● শুক্রবার, মে 3, 2024 | 08:12 অপরাহ্ন

বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

আমার প্রিয় বিদ্যালয়

 

“বিদ্যালয়, মোদের বিদ্যালয়, এখানে সভ্যতারই ফুল ফোটানো হয়।”

বিদ্যালয় হলো প্রকৃত মানুষ গড়ার কারিগর। এখানে সভ্যতা শেখানো হয়, অসভ্য দূর করার কৌশল শেখানো হয়। দেশ ও জাতি গঠনে আমাদের কতটুকু অগ্রগতি প্রয়োজন সে শিক্ষা দেওয়া হয়। এছাড়া জীবন চলার পথে যে শিক্ষা গুলো প্রয়োজন সার্বিকভাবে আমাদের সেই জ্ঞান দান করা হয়।

অন্যদিকে আমাদের সবার কাছে বিদ্যালয় এক পরম ভালোবাসার জায়গা। এখানে প্রতিদিন বন্ধুদের সাথে আমাদের দেখা হয়। আমাদের খেলাধুলা থেকে শুরু করে পড়াশোনা সবকিছু নিয়ে প্রতিদিনকার বেশিরভাগ সময় আমাদের বিদ্যালয়ে-ই কেটে যায়। আমাদের শিক্ষকেরা সব সময় বিদ্যালয়ের কার্যক্রমের সবক্ষেত্রে আমাদের সাহায্য করে থাকেন। বিদ্যালয় থেকে এক-দু দিনের ছুটি যেমন আমরা পছন্দ করি, তেমনি দীর্ঘদিন বিদ্যালয় থেকে দূরে থাকা অতি অপছন্দের।

অনেক আগেই আমার স্কুল জীবন শেষ হয়েছে। কিন্তু যে বিদ্যালয় থেকে আমার শিক্ষা জীবন শুরু হয়েছে সেই বিদ্যালয় সারা জীবন আমার স্মৃতির পাতায় আঁকা থাকবে। মনের ফ্রেমে বাঁধা থাকবে।

যে বিদ্যালয়ে আমার শিক্ষা জীবন শুরু হয়েছে, যার সূত্র ধরে আজ আমি এত দূর পর্যন্ত আসতে পেরেছি এবং আমার প্রিয় বিদ্যালয় হিসেবে ধরে রেখেছি সেই বিদ্যালয়ের নাম বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এটি রাজধানী ঢাকার মধ্য বাড্ডার মহাসড়কের পাশে অবস্থিত। এখানে শিশু শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান করানো হয়। বিদ্যালয়টির সামনে একটি খেলার মাঠ আছে। এই মাঠে দিনের পর দিন আমরা খেলে কাটিয়েছি। প্রতিদিন সকাল আটটা থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রীদের কোলাহলে মুখর হয়ে থাকে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ। আমাদের ক্লাসরুম গুলো ছিল মস্ত বড়, এক একটি ক্লাসে প্রায় ৫০-৬০ জন ছাত্র-ছাত্রী একসাথে ক্লাস করতাম। ক্লাসের জানালা দিয়ে সড়কে গাড়ি চলাচল, তার পাশে পোশাক কারখানা, এলাকার সবচেয়ে বড় বাজার, নামকরা নুর নবী মার্কেট দেখতে খুব ভালো লাগতো।

বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এক অন্যতম নামজাদা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এটি ১৮৯৫ সালে এটি স্থাপিত হয়। যাত্রারম্ভে থেকেই এখানে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়। সময়ের সাথে সাথে এর সুনাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। হাজার হাজার শিক্ষার্থী এই বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে কীর্তিমান হয়েছেন। এই বিদ্যালয়ের মোট ১৪ টি শ্রেণিকক্ষ, দুইটি শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কক্ষ আছে। আমি সেই বিদ্যালয়ে পড়ার সময় প্রায় ১৫ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা ছিল। আর আগেই বলেছি আমাদের ওই বিদ্যালয় সবচেয়ে বড় প্রাঙ্গণ হলো আমাদের খেলার মাঠ। সেখানেই প্রতিবছরের স্পোর্টস আয়োজিত করা হতো।

বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

তখন বিদ্যালয়টিতে প্রায় ১০০০ ছাত্র-ছাত্রী ছিল। বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় দুই শিফটে ভাগ করা ছিল। সকাল আটটায় প্রথম প্রার্থনা দিয়ে দিন শুরু হতো। তারপর একটি ছোট্ট সমাবেশের মাধ্যমে আমাদের উৎসাহিত করার একটি নিয়ম ছিল। প্রত্যেক শিক্ষক-শিক্ষিকা তাদের মূল্যবান সময় দিয়ে আমাদের প্রত্যেকদিন উৎসাহিত করতেন। প্রতি বছর আমরা আমাদের স্কুল প্রতিষ্ঠা দিবস পালন করতাম। নানারকম উৎসব আনন্দের মাধ্যমে আমাদের বিদ্যালয় জীবন আরও আনন্দময় হয়ে উঠেছিল।

তখন আমাদের বিদ্যালয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো। বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হতো। এছাড়াও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, স্বাধীনতকা দিবস, বিজয় দিবস সহ বিভিন্ন দিবসে নানা রকম আয়োজন করা হতো।

বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে থাকাকালীন একটি স্মরনীয় দিন আজও আমার মনে পড়ে। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় একদিন স্কুলের কয়েকজন ম্যাম এক অনুষ্ঠানে শাহাজাদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় যাচ্ছিলেন। কিন্তু এটা আমরা জানতাম না। যাওয়ার আগে তারা নিজেরা আলোচনা করছিলেন। তখন আমরা স্যারের ক্লাস করছিলাম। কিন্তু কোনো একটা কারণে প্রধান শিক্ষক আমাকেও তাদের সাথে সেই অনুষ্ঠানে যেতে বলেন। তাদের সাথে গেলে অনেক জ্ঞাণী-গুণী মানুষের সাথে সময় কাটানোর সুযোগ পাব। একটা সুন্দর দিন কাটাতে পারব ভেবে আমিও যেতে রাজি হলাম। সেই অনুষ্ঠানে গিয়ে জ্ঞাণী-গুণী মানুষদের সাথে সারা দিন কাটানো সময়টা আমার স্মৃতির পাতায় রয়ে গেছে এবং আজও আমার মনে পড়ে।

প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনি পরীক্ষায় প্রতি বছর এই বিদ্যালয় থেকে অনেক শিক্ষার্থীরা এ প্লাস পেয়ে শিক্ষক ও অভিভাবকদের মুখ উজ্জল করে। বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শুধুমাত্র ভালো শিক্ষা এবং ভালো ফলাফল নয়, বরং সর্বদা একজন ভালো মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে উৎসাহ দেয়। সেইজন্য এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নানা শিক্ষানুরাগীদের মনে এক বিশেষ স্থান অধিকার করে নিয়েছে। শুধু পুঁথিগতই নয়, প্রকৃত মূল্যবোধের শিক্ষার আলোয় আলোকিত হয়ে বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা নিজেদের জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমি এই বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম ভেবে গর্ব বোধ করি।

এই সম্পর্কিত আরও

আবুল কালাম
বিস্তারিত...
 আরবে ঈদের তারিখ ঘোষণা
বিস্তারিত...
813788_175
বিস্তারিত...
রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান
বিস্তারিত...
জান্নাতের ফুল
বিস্তারিত...
মিসওয়াকের ফজিলত
বিস্তারিত...