● শুক্রবার, এপ্রিল 26, 2024 | 12:40 অপরাহ্ন

বর্তমানে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের দূরত্ব কেন?

বর্তমানে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের দূরত্ব কেন?

একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রাণ হলো শিক্ষক ও শিক্ষার্থী। একটি পরিবারে যেমন সবচেয়ে ছোট বাচ্চাটি পুরো পরিবারকে আনন্দে মাতিয়ে রাখেন তেমনি শিক্ষার্থীদের গুনগুন শব্দে পুরো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভরপুর থাকে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

আমাদের দেশে শিক্ষক-ছাত্রের মধ্যে রয়েছে এক আশ্চর্য সেতুবন্ধন। শিক্ষকেরা ছাত্রদের সাথে অভিভাবকতুল্য আচরণ করেন, কখনো কখনো বন্ধুসুলভ হন আবার কখনো কোনো ভুল বা অন্যায় করলে শাসন করেন। ফলে শিক্ষকের আচরণের মধ্যে অভিভাবক ও বন্ধুত্বের একটি মিশ্রণ থাকে। দেশের সংস্কৃতিতে হাজার বছর ধরে ছাত্র-শিক্ষকের পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সম্পর্ক চলে আসছে।

ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্ক শুধু শিক্ষা কিংবা জ্ঞানার্জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। একজন ছাত্রের বিপদ-আপদ ও দুর্দিনে শিক্ষককে ছায়ার মতো পাশে থাকতে হবে। জ্ঞান বিতরণের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে হবে। কারণ, পৃথিবীতে বাবা-মায়ের সঙ্গে মানুষের যেমন জন্মগত সম্পর্ক, তেমনি শিক্ষকদের সঙ্গে ছাত্রদের রয়েছে এক আত্মার সম্পর্ক।

একটা প্রবাদ আছে, ‘বাবা-মা বানায় ভূত আর শিক্ষক বানায় পুত’। অর্থাৎ বাবা-মা সন্তান জন্ম দেয় ঠিকই, কিন্তু সেই সন্তানকে মানুষ করেন শিক্ষক। কিন্তু আদৌ কি মানুষ হচ্ছে তারা? আদৌ কি ছাত্ররা শিক্ষকের কাছে থেকে ভালো কিছু পাচ্ছেন? ছাত্র-শিক্ষকের মধ্যে যে সম্পর্ক থাকা দরকার, তা কি আদৌ আছে? আদৌ কি ভালোবাসা, মহানুভবতা, সম্মানবোধ, নম্রতা আছে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের মাঝে?

এক ছোট ভাইকে প্রশ্ন করলাম, তুই তো স্কুলে লেখাপড়া করিস। বলতো একজন শিক্ষকের কোন কোন বৈশিষ্ট্য থাকলে ‘শিক্ষক’ বলা যায়? সে আমার কথায় উত্তর দিল, ‘শিক্ষক হচ্ছেন কিছুটা গম্ভীর প্রকৃতির মানুষ, তার রাগ থাকে, তার হাতে বেত থাকে, তিনি পড়া দিয়ে দেন আবার পড়া নেন, পড়া না পারলে মারেন, বকা দেন।’ তখন ছোট ভাইকে প্রশ্ন করলাম, শিক্ষকদের দেখে তোর ভয় লাগে? জবাবে বলল, ‘ভয় তো লাগবেই।’ ছোট ভাইটার কথা শুনে অবাক হইনি। কেননা এটাই স্বাভাবিক, বর্তমানে আমাদের চারপাশের অধিকাংশ শিক্ষকেরাই এই বৈশিষ্ট্যগুলো ধারণ করেন।

একজন শিক্ষক যখন একজন ছাত্রের কাছে ভয়ের কারণ হন, ওই শিক্ষকের কাছে ছাত্ররা কী শিখবে? একটা ছাত্রের বারবার ভুল হবে এটাই স্বাভাবিক। ভুল হবে বলেই তো সে গুরুর কাছে শিখতে আসে। আর গুরু বসে থাকে একটা লাঠি নিয়ে, ভুল হলেই পিটুনি, ভুল হলেই বকুনি, ভুল হলেই পরীক্ষার খাতায় নম্বর কম, ভুল হলেই অপমান। ছাত্ররা ক্লাসের ভেতর সারাক্ষণ ভয়ে থাকেন, স্যার কখন কী বলে বসেন, কখন কী করে-না করে! ভয়েই ছাত্ররা শিক্ষকদের কাছে যেতে চায় না। আর এভাবে ভয়ভীতি থেকে ছাত্র-শিক্ষকদের মাঝে একটা দূরত্ব তৈরি হয়।

অরিত্রী নামে এক শিক্ষার্থীর মা বলেছিলেন, আমাদের সময় টিচাররা শরীরে মারতেন। আজকাল টিচাররা মারেন মনে। তার এই কথাটি যেন দিনের আলোর মতো সত্য। যার সাথে যার দূরত্বটা বেশি, তার সাথে সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতাও অনেক কম, তার প্রতি ভালোবাসা ও সম্মানবোধটাও কম থাকে।

বর্তমানে দেখা যায়, একজন ছাত্র শিক্ষকের সাথেই কথা বলতে ভয় পান। অধ্যক্ষের সাথে কথা বলার সাহসই পান না। তাদের সাথে কোনো অনিয়ম হলে নির্ভয়ে বলতে পারেন না। কোনো সমস্যায় পড়লে তাদের কাছ থেকে কোনো সমাধান পান না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় ছোট থেকে ছোট ভুল করলেও বিভিন্ন কটুক্তি শুনতে হয়। তাদের সাথে দুর্ব্যবহার করা হয়। যা তাদের মনে দাগ কাটে। কোনো যৌক্তিক দাবি তুললে নানা হেনস্তার মুখে পড়তে হয়। অথচ শিক্ষকদের উচিত ছিল শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলা, তাদের সমস্যাগুলো সমাধান করা, তাদের পাশে দাঁড়ানো।

শিক্ষার্থীরা যখন সমস্যার কোনো সমাধান পান না তখন অনেক শিক্ষার্থী সমস্যার কারণে শিক্ষা জীবন থেকে ঝরে যায়। বন্ধ হয়ে যায় তাদের লেখাপড়া। শিক্ষা জীবন থেকে দূরে সরে যাওয়ায় কেউ চলে যায় খারাপ পথে আবার কেউ বেছে নেয় আত্মহত্যার পথ। একজন শিক্ষক যদি তার ছাত্র-ছাত্রীর প্রয়োজন না বুঝেন তাহলে ধ্বংস হবে শিক্ষা ব্যবস্থা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফিরে আসবে না সুদিন বা শৃঙ্খলা।

এই সম্পর্কিত আরও

আবুল কালাম
বিস্তারিত...
 আরবে ঈদের তারিখ ঘোষণা
বিস্তারিত...
813788_175
বিস্তারিত...
রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান
বিস্তারিত...
জান্নাতের ফুল
বিস্তারিত...
কাজী নজরুল ইসলাম
বিস্তারিত...