শায়েখ সাঈদ হালবী। শাম অঞ্চলের ইতিহাসখ্যাত আলেম ও পণ্ডিতগণের একজন অন্যতম। তার অভ্যাস ছিল, ছাত্রদেরকে পড়ানোর সময় তিনি তার দু’পা সামনের দিকে ছড়িয়ে বসতেন। ছাত্ররা তার দু’পাশে গোলাকার হয়ে বসে ইলম অর্জন করতেন।
একদিন তার দরস চলাকালে তৎকালীন মিসর শাসকের পুত্র ইবরাহীম বাশা এসে উপস্থিত হলেন। তিনি এসে মজলিসে সামনের অংশে শায়েখের মুখোমুখি বসে পড়লেন। অথচ শায়েখ সাঈদ হালবী তখনও পা ছড়িয়ে আয়েশি ভঙ্গিতে বসে আছেন। এভাবে বসেই তিনি অগণিত ছাত্র-শাগরিদকে অনবরত পড়াচ্ছেন।
শাসকপুত্রের আগমনেও তার মধ্যে কোনো নড়াচড়া দেখা গেলো না। তিনি তাকে সম্মান জানাতে দরস ছেড়ে ব্যতিব্যস্ত হলেন না।
শায়েখের এমন বেপরোয়া ভাব-ভঙ্গি শাসকপুত্র যুবরাজ ইবরাহীমকে অবাক করলো। তিনি মনে মনে অপমানবোধ করলেন। ভাবলেন, ‘শায়েখ আমার প্রভাব-প্রতিপত্তি সম্পর্কে হয়তো অবগত নন। তাকে আমার সম্মান আর সম্পদ সম্পর্কে কিছুটা জানানো প্রয়োজন। তাতেই তিনি টের পাবেন, আমি কোন জন?’
দরস শেষে যুবরাজ সালাম-মুসাফাহা করে বিদায় নিলেন। তখনও তিনি পা ছড়িয়ে বসে আছেন।
শাহী মহলে ফিরে গিয়েই যুবরাজ ইবরাহীম শায়েখ সাঈদ হালবীর নামে এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা হাদিয়া পাঠালেন। তিনি ভাবলেন, স্বর্ণমুদ্রা পেয়ে শায়েখ পুলকিত হবেন। আগামীতে তিনি উপস্থিত হলে তাকে সম্মান-সমাদর করবেন। পা গুটিয়ে এগিয়ে এসে স্বাগত জানাবেন। সম্মানের সাথে পাশে বসাবেন।
রাজপুত্রের দুত এক হাজার স্বর্ণমুদ্রার তোহফাথলি নিয়ে শায়েখের কাছে এসে উপস্থিত হলেন। সালাম জানিয়ে যুবরাজের সালাম ও তার পক্ষ থেকে বিনীত নজরানা পেশ করলেন।
শায়েখ বুঝে ফেললেন। যুবরাজ তাকে সর্ণমুদ্রার বিনিময়ে কিনে নিতে চাইছেন। ইতিহাসের সবক থেকে তিনি বেশ ভালো করেই জানেন, শাসক এবং শাসক পরিবার এভাবেই জ্ঞানীদের কাছ থেকে সম্মান-সমাদর কিনে নিয়ে থাকেন। তাই বলে আমার কাছেও?
সাঈদ হাবলী যুবরাজের পাঠানো তোহফা ফেরত দিলেন। শাহী দূতকে বলে দিলেন, ‘তোমার যুবরাজ সাহেবজাদাকে বলে দিও, যে লোক পা বাড়িয়ে বসে থাকে, সে হাদিয়া তোহফা দেখলে তার হাতও বাড়াবে, এটা ভাবা ঠিক নয়। তাকে জানিয়ে দাও, আমার পা প্রলম্বিত কিন্তু হাত প্রসারিত নয়।
দূত ফিরে এলেন। তিনি যা দেখলেন, তাতে তার জ্ঞান হয়েছে- এ মানুষ কেনা-বেচার নন। কারো পাঠানো স্বর্ণের তাপে কিংবা প্রভাবের উত্তাপে বিগলিত হওয়ার মতো নন তিনি।