1. faysalislam405@gmail.com : ফয়সাল ইসলাম : ফয়সাল ইসলাম
  2. tajul.islam.jalaly@gmail.com : তাজুল ইসলাম জালালি : তাজুল ইসলাম জালালি
  3. marufshakhawat549@gmail.com : মারুফ হোসেন : মারুফ হোসেন
  4. saddam.samad.24@gmail.com : সাদ্দাম হোসাইন : সাদ্দাম হোসাইন

● Friday, April 19, 2024 | 10:51 AM

বড় ছেলের ঈদ

শেখ মুস্তাকিম মুস্তাক (আদি)
  • প্রকাশিতঃ সোমবার, ২৬ জুলাই, ২০২১
  • ৩১২ বার পড়া হয়েছে
বড় ছেলের ঈদ
বড় ছেলের ঈদ
শেখ মুস্তাকিম মুস্তাক (আদি), হবিগঞ্জ

ঈদুল আযহা বিষয়ে লেখা প্রতিযোগিতায় ১ম স্থান অধিকারী-
শেখ মুস্তাকিম মুস্তাক (আদি), হবিগঞ্জ


ভোর ৫টার সময় দরজার কড়া নাড়ে মুস্তাকিম। অনেক ক্লান্ত সে। কালকে সারাদিন কাজ করে সারারাত জার্নি করে গ্রামের বাড়ি এসেছে।  কিছুক্ষণ পর ছোট বোন নীলা এসে দরজা খুলে দেয়। দোপাল্লার দরজা। ঘুম ঘুম চোখে দরজা খুলেছে নীলা। দু-হাতে চোখ ডলে সামনে তাকিয়ে দেখে তার বড় ভাই দাড়িয়ে আছে। ভাইয়া!! বলেই খুশি হয়ে জড়িয়ে ধরে। 


 বাবা নেই! মুস্তাকিম সংসারের দায়িত্ব বহন করছে। সবেমাত্র ক্লাস টেন এ উঠেছিল। তার মধ্যেই বাবা মারা যান। এমনিতেই তাদের টানাটানির সংসার তার মধ্যে এখন আবার সবার মাথায় ছাঁদ নেই দুনিয়াতে। নীলা ক্লাস ফোরে পড়ে।পড়ালেখায় অনেক ভালো সে।মুস্তাকিমের স্বপ্ন বোন ডাক্তার হবে। মানুষের সেবা করবে।বোন কে বড় ঘরে বিয়ে দিবে। বোন কে অনেক ভালোবাসে সে। সবসময় বোনের সমস্ত আবদার পূরণ করে।

–কেমন আছিস মিষ্টি পরি? মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে।

নীলা এতদিন পর ভাইয়ের মুখে মিষ্টি পরি ডাকটা শুনে খুশি হয়ে যায়। নিজের অজান্তেই মুখে হাসি ফোটে উঠে। হাসি মুখে জবাব দেয় নীলা।

–ভালো আছি ভাইয়া। তুমি কেমন আছো? জানোতো,? মায়ের শরীরটা আবার খারাপ করেছে। কতবার বলেছি ডাক্তার দেখাও ডাক্তার দেখাও। কিন্তু কে শোনে কার কথা? এখন তুমি এসে গেছো, মা একমাত্র তোমার কথাই শুনে। তুমি মা কে ডাক্তার দেখাও তো ভাইয়া। কাশতে কাশতে দিন-রাত এক করে দেয়। কিছুটা অভিমানী স্বরে  বলে নীলা।
কথাগুলো বলে ছোট একটা নিঃশ্বাস ফেলে।  বোনের হাতে মার্কেট করা ব্যাগ গুলো দিয়ে মায়ের কাছে যায় মুস্তাকিম। 

–এগুলো কি শুনছি মা? তুমি ডাক্তার দেখাও না কেন?  মায়ের কাছে গিয়ে মা কে সালাম করতে করতে বলে মুস্তাকিম।
ছেলেকে দেখে খুশি হোন সুফিয়া বেগম। তার সমস্ত অসুস্থতা যেন নিমিষেই উধাও হয়ে যায়। উঠে বসতে বসতে এক গাল হাসি নিয়ে বলেন সুফিয়া বেগম_
–ওই পাগলিটার কথা শুনিস না তো!আমার কিচ্ছু হয়নি। তুই এসে গেছিস, এখন আমি এমনি সুস্থ হয়ে যাবো। কাশতে কাশতে বলেন কথাগুলো।
তাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়।সেখানে আবার ঔষধ খাবে! মুস্তাকিম বুঝতে পারে,মা কেন ডাক্তার দেখাতে চায় না। কিছু না বলে মা কে শুইয়ে দেয়।
মায়ের হাতে একটা শাড়ী দিয়ে বলে – তুমি না নীল শাড়ি খুব পছন্দ করো। তোমার জন্য নীল শাড়ী নিয়ে আসছি, ঈদের দিন শাড়ীটা পড়বে। বুঝেছো? উত্তরে সুফিয়া বেগম কিছু বললেন না। শুধু দুটো ফোটা চোখের পানি ফেললেন। এটা দুঃখের কান্নাার পানি না, এটা আনন্দের পানি। ছেলে মেয়ের দিকে তাকিয়ে নিজের সব ইচ্ছে মাটি চাপা দিয়ে এসেছে এতদিন। আজকে সেই ছেলে মায়ের জন্য শাড়ী নিয়ে আসছে। মায়ের কাছে এর চেয়ে খুশির বিষয় আর কি হতে পারে!
`–জামা গুলো আমার খুব পছন্দ হয়েছে  ভাইয়া। কিন্তু তোমার জন্য তো কিছু আনোনি? ভার মুখে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে নীলা। 

বোনে কথা শুনে কি বলবে বুঝতে পারছে না মুস্তাকিম।  তার-ও তো ইচ্ছে হয় নতুন জামা পড়ে ঈদের নামাজ পড়বে। যখন  মনে পড়ে মা আর বোন তার অপেক্ষা পথ চেয়ে রয়েছে তখন সেসব ইচ্ছে গুলি এমনিতেই মরে যায়।  মনের মধ্যে কষ্ট থাকলেও নীলা কে হাসি মুখে জবাব দেয় মুস্তাকিম_
–আমার তো অনেক জামাকাপড় আছে। তুই না বলেছিলি নীল আর লাল দুটো জামা তোর লাগবে।তোর জন্য নিয়ে এসেছি সেগুলো। এবার ঈদের দিন আর কাদবি না কেমন! বোন কে জড়িয়ে ধরে মুস্তাকিম। গাল বেয়ে দুফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে।কাউকে দেখতে না দিয়ে মুছে ফেলে সেই পানিগুলো।

ঈদের দিন মুস্তাকিম সেই পুরোনো পাঞ্জাবীটা পরে নামাজ পড়ে।
মু্স্তাকিম আর রিফাত দাড়িয়ে দাড়িয়ে গল্প করছিলো। রিফাত অনেকক্ষণ ধরেই ভাবছে যে মুস্তাকিম নতুন জামা পরেনি কেন। কৌতূহলের বশে জিজ্ঞেস করে নেয় রিফাত_
–ভাই তুই আজকে নতুন জামা পরিসনি কেন? মুস্তাকিম উত্তরে কিছু বললো না।সামনে দিকে হাত দিয়ে ইশারা করলো। রিফাত সামনে তাকিয়ে দেখে নীলা আর তার বান্ধবীরা খেলা করছে। লাল একটা ড্রেস পড়েছে নীলা। অনেক সুন্দর লাগছে তাকে।কিন্তু মুস্তাকিমের ইশারা মানে বুঝতে পারেনি রিফাত।

রিফাত কিছু বলতে যাবে তখনই মুস্তাকিম বলে_
–দেখছিস? মিষ্টি পরি টাকে আজকে কত্ত কিউট লাগতাছে! ওর খুশির কাছে আমার নতুন জামার কোনো মূল্য আছে বল?
চোখের কোণে জল এসে গেছে মুস্তাকিমের।এটা দুঃখের পানি না, বোন কে খুশি দেখে সুখের পানি বয়ে আসছে চোখ দিয়ে। রিফাত মুস্তাকিম কে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়। 

আসলে এটাই পৃথিবীর নিয়ম। পরিবারের বড় ছেলেদের তাদের ছোট ভাই বোন এর দিকে তাকিয়ে নিজেদের সমস্ত ইচ্ছে গুলোকে কবর দিতে হয়। তবুও তাড়া খুশি। তারা নিজের পরিবার,আদরের ভাই-বোন এর মুখে হাসি ফোটাতে পেরেছে।এটাই যেন তাদের কাছে পৃথিবী জয় করার সমান। ভালো থাকুক পরিবারের বড় ছেলেরা। সবসময় যেন তারা পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে পারে এটাই আমাদের একমাত্র চাওয়া। ভালো থাকুুক সমস্ত পরিবার,সব বড় ছেলেগুলো!

বিজ্ঞাপন




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই সম্পর্কিত আরও
© ২০২৪- সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । হক কথা ২৪.নেট
Theme Designed BY Kh Raad ( Frilix Group )