● শুক্রবার, এপ্রিল 26, 2024 | 03:34 পূর্বাহ্ন

ঈদের সূচনা

যেভাবে ঈদের সূচনা হয়েছে

সকল ধর্মের লোকদেরই নির্দিষ্ট কিছু উৎসবের দিন রয়েছে। জাহেলি যুগেও আরবে নওরোজ ও মেহেরজান নামের দুটি উৎসব পালন করা হতো। আল্লাহ তা’আলা সব ধর্মের উৎসবের চেয়ে মুসলমানদেরকে উত্তম দুটি উৎসব উপহার দিয়েছেন। সেটি হলো ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা। রমযানের একটি মাস সিয়াম সাধনার পর শাওয়াল মাসের প্রথম তারিখে পালন করা হয় ঈদুল ফিতর। আর জিলহজ মাসের ১০ তারিখে পালন করা হয় ঈদুল আযহা।

নামকরণ

ঈদ শব্দটি আরবি। এর অর্থ খুশি, আনন্দ, অনুষ্ঠান, উৎসব, পর্ব ইত্যাদি। শব্দের মূল রূপ হলো আওদ, যার অর্থ ফিরে আসা। আরবদের কাছে ঈদ হলো যে সময় আনন্দ ও দুঃখ ফিরে আসে। আল মুহিত অভিধানে রয়েছে, যে রোগ, দুঃখ, দুশ্চিন্তা বা অনুরূপ কোনো কিছু বারবার ফিরে আসে তাকে ঈদ বলা হয়। আল মুনজিদ অভিধানে বলা হয়েছে, ঈদ এমন দিনকে বলা হয়, যাতে লোকজনের সমাগম হয় বা কোনো সম্মানিত ব্যক্তি অথবা গুরুত্বপূর্ণ কোনো ঘটনার স্মৃতিচারণা করা হয়।

প্রতি বছর আনন্দ-খুশি ও নতুন পোশাক-পরিচ্ছদ নিয়ে মুসলিম জাতির কাছে ঈদ ফিরে আসে। এ কারণে ঈদের দিনকে আনন্দ ও খুশির দিন বলা হয়।

ঈদের প্রবর্তন

মহানবী (সা.) মক্কায় থাকাকালীন সময়ে ঈদ ছিল না। মদিনায় হিজরত করার পর ঈদের প্রবর্তন হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় গিয়ে দেখেন যে, মদিনার ইহুদিরা শরতের পূর্ণিমায় নওরোজ উৎসব এবং বসন্তের পূর্ণিমায় মেহেরজান উৎসব পালন করছে। মুসলমানদের মধ্যেও অনেকে সেই উৎসবে যেত। আর তাই মহানবী (সা.) মুসলমানদের এ দুটি উৎসবে যেতে নিষেধ করেন। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ তা’আলা ওই উৎসবের বিনিময়ে আমাদের ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার মতো পবিত্র দুটি দিন দান করেছেন। এতে তোমরা পবিত্রতার সঙ্গে উৎসব পালন করো। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন মদিনায় আগমন করেন তখন তাদের দুটি দিন ছিল, যাতে তারা উৎসব পালন করত। তিনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন, এ দুটি কিসের দিন? তারা বলল, আমরা জাহেলি যুগে এ দুই দিন খেলাধুলা ইত্যাদি উৎসব পালন করতাম। এ নিয়মই চলে আসছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মহান আল্লাহ তোমাদের জন্য এ দুটির পরিবর্তে এর চেয়ে উত্তম দুটি দিন দান করেছেন। তা হলো ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ১১৩৬; মুসনাদ আহমাদ, হাদিস : ১৩৬৪৭)

মদিনায় প্রথম ঈদ

দ্বিতীয় হিজরি মোতাবেক ৬২৪ খ্রিস্টাব্দের ৩০ বা ৩১ মার্চ মুসলমানরা প্রথম ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেন। সেসময় বর্তমান ঈদের মতো নতুন জামাকাপড়, কেনাকাটার ধুমধাম ছিল না। তবে আনন্দ-খুশিও তাদের মধ্যে কম ছিল না। রাসূলুল্লাহ (সা.) ঈদের দিন ছোট-বড় সবার আনন্দের প্রতি নজর রাখতেন। শরিয়তে সম্মত এমন সব আনন্দ উৎসব করার অনুমতি দিতেন।

ঈদে রাসুল (সা.)-এর আমল

মহানবী (সা.) ঈদের দিনে সকাল সকাল উঠে গোসল করতেন, সুগন্ধি ব্যবহার করতেন, উত্তম পোশাক পরিধান করতেন। ঈদুল ফিতরে কিছু মিষ্টি দ্রব্য খেয়ে ঈদের জামাতে যেতেন।

অন্যদিকে ঈদুল আজহায় কিছু খেতেন না। কুরবানির গোশত দিয়ে প্রথম খাওয়া শুরু করতেন। ঈদগাহে এক রাস্তা দিয়ে যেতেন, অন্য রাস্তা দিয়ে আসতেন। ছোট-বড় সকলকে ঈদের শুভেচ্ছা জানাতেন। গরিব-দুঃখীদের খোঁজখবর রাখতেন। অতঃপর ঈদগাহে গিয়ে অতিরিক্ত ছয় তাকবিরের সাথে দুই রাকাত নামাজ আদায় করতেন। নামাজ থেকে ফারেগ হয়ে খুতবা দিতেন। ঈদুল ফিতরের খুতবায় ঈদের করণীয় কাজ এবং ঈদুল ফিতরের গুরুত্ব বর্ণনা করতেন।

সাহাবায়ে কেরামের ঈদ

সাহাবায়ে কেরাম সব সময় সকল কাজে রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে অনুসরণ করতেন। তাঁরা ঈদের দিন শুভেচ্ছা বিনিময় এ বাক্যের মাধ্যমে করতেন, ‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকা’ অর্থাৎ মহান আল্লাহ আমাদের ও আপনার ভালো কাজগুলো কবুল করুন।

সাহাবায়ে কেরাম মাহে রমজানে সারা মাস রোযা রেখেও গুনাহ মাফ হয়েছে কি না, এ নিয়ে বেশি চিন্তিত থাকতেন। তাই আমিরুল মুমিনিন হযরত ওমর ফারুক (রা:) ঈদের দিন ঘরের দরজা বন্ধ করে বলতে থাকেন, আমার গুনাহ মাফ না হলে আমি ঈদগাহে গিয়ে কিভাবে ইমামতি করতে পারি। তাঁদের ঈদে নতুন জামা, জুতা ও খাওয়া দাওয়ার ধুমধাম ছিল না। তবে আনন্দ কম ছিল না।

মহানবী (সা.)-এর সান্নিধ্য লাভ করা, তাঁকে কাছে পাওয়া, তাঁর নির্দেশ পালন করাই ছিল তাঁদের প্রকৃত আনন্দ। সাহাবায়ে কেরাম ঈদের দিন অনেক দূর থেকে মহানবী (সা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য এবং তাঁর পেছনে দুই রাকাত নামাজ পড়ার জন্য ছুটে আসতেন।

এই সম্পর্কিত আরও

আবুল কালাম
বিস্তারিত...
 আরবে ঈদের তারিখ ঘোষণা
বিস্তারিত...
813788_175
বিস্তারিত...
রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান
বিস্তারিত...
জান্নাতের ফুল
বিস্তারিত...
কাজী নজরুল ইসলাম
বিস্তারিত...