● মঙ্গলবার, এপ্রিল 23, 2024 | 07:45 অপরাহ্ন

১৭ রমজান ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধ

১৭ রমজান ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধ

আজ ১৭ রমজান ঐতিহাসিক বদর দিবস। ইসলামের ইতিহাসে গৌরবোজ্জ্বল এক অধ্যায় বদর যুদ্ধ। আজকের এই দিনে ইতিহাস বিখ্যাত ‘বদর যুদ্ধ’ সংঘটিত হয়েছিল। দ্বিতীয় হিজরির ১৭ রমজান ঐতিহাসিক বদর প্রান্তরে সংঘটিত এই যুদ্ধটি মানবজাতির ইতিহাসে অনন্য এক ঘটনা। এটি ছিল অসত্যের বিরুদ্ধে সত্যের লড়াই। দাম্ভিকতার বিরুদ্ধে একনিষ্ঠতার লড়াই।

হিজরতের পর মদিনায় ইসলামের দৃঢ় প্রতিষ্ঠা ও প্রসার, হজরত মুহাম্মদ (সা:)-র প্রভাব প্রতিপত্তি বৃদ্ধি ও কর্মকাণ্ডে সাফল্য লাভ এবং মদিনা নগরীর শাসন-শৃঙ্খলা উন্নতি বিধানে মক্কার কুরাইশদের মনে তীব্র অসন্তোষ ও ক্ষোভের সঞ্চার হয়। এই ঈর্ষা ও শত্রুতা থেকেই পৌত্তলিক মক্কাবাসী মহানবী (সা:)-র সাথে প্রথম যে সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটায় ইসলামের ইতিহাসে তা ’গাজওয়ায়ে বদর’ বা বদর যুদ্ধ নামে পরিচিত।

পবিত্র কুরআনের সুরা আলে ইমরান ও সুরা আনফালে বদর যুদ্ধের সবিস্তার বর্ণনা এসেছে। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:)-এর মতে, সুরা আনফাল বদর যুদ্ধ সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। এ সুরায় যুদ্ধলব্ধ সম্পদ, যুদ্ধবন্দি, ফেরেশতাদের অংশগ্রহণসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহের আলোচনা রয়েছে। আর সুরা আলে ইমরানে মুসলমানদের অবস্থা, আল্লাহর সাহায্য ও তার উদ্দেশ্য সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এ সুরায় আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ভবিষ্যতেও সাহায্যের ধারা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। বদর যুদ্ধের অবস্থা তুলে ধরে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘আল্লাহ তোমাদের বদরে সাহায্য করেছেন। অথচ তোমরা ক্ষীণশক্তি। ’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১২৩)

বদর যুদ্ধের ঘটনাঃ- মক্কার কুরাইশদের শত্রুতা; আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের ষড়যন্ত্র, মদিনার ইহুদিদের ষড়যন্ত্র, আর্থিক কারণ, নাখলার খণ্ডযুদ্ধ, আবু সুফিয়ানের কাফেলা আক্রমণের মিথ্যা গুজব ছড়ানোর প্রেক্ষাপটের ভিত্তিতে রাসুল (সা:) কর্তৃক আনসার এবং মুহাজির নিয়ে গঠিত মাত্র ৩১৩ জনের একটি মুসলিম বাহিনী কুরাইশ বাহিনীর মোকাবেলা করার জন্য প্রেরিত হন। মদিনা থেকে ৮০ মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে বদর উপত্যকায় দ্বিতীয় হিজরির ১৭ রমজান (৬২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৩ মার্চ) মুসলিম বাহিনীর সাথে বিধর্মী কুরাইশদের সংঘর্ষ হয়। হজরত মুহাম্মদ (সা:) স্বয়ং নিজে এ যুদ্ধ পরিচালনা করেন। হজরত মুহাম্মদ (সা:) মুসলিম সৈন্য সমাবেশের জন্য এমন একটি স্থান বেছে নেন যেখানে সূর্যোদয়ের পর যুদ্ধ শুরু হলে কোনো মুসলমান সৈন্যের চোখে সূর্য-কিরণ পড়বে না।

প্রথমে প্রাচীন আরব রেওয়াজ অনুসারে মল্লযুদ্ধ হয়। মহানবীর নির্দেশে হজরত আমির হামজা, হজরত আলী ও আবু ওবায়দা কুরাইশ পক্ষের নেতা উতবা, শায়বা এবং ওয়ালিদ বিন উতবার সাথে মল্লযুদ্ধে অবতীর্ণ হন। এতে শত্রুপক্ষীয় নেতৃবৃন্দ শোচনীয়ভাবে পরাজিত ও নিহত হয়। উপায়ান্তর না দেখে আবু জেহেলের নেতৃত্বে কুরাইশগণ মুসলমানদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারা মুসলমানদের ওপর প্রচণ্ডভাবে আক্রমণ চালাতে লাগলো, কিন্তু প্রতিকূল অবস্থায়ও সংঘবদ্ধ ও সুশৃঙ্খল মুসলিম বাহিনীর মোকাবেলা করা কুরাইশদের পক্ষে সম্ভব হয়নি।

১৭, ১৯ এবং ২১ রমজান এই তিন দিনই অসামান্য রণ-নৈপুণ্য অপূর্ব বিক্রম ও অপরিসীম নিয়মানুবর্তিতার সাথে যুদ্ধ করে মুসলমানগণ বদরের গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধে বিধর্মী কুরাইশগণকে শোচনীয়ভাবে পরাজিত করে। যুদ্ধে ৭০জন কুরাইশ সৈন্য নিহত হয় ও সমসংখ্যক সৈন্য বন্দী হয়। অপরদিকে মাত্র ১৪জন মুসলিম সৈন্য শাহাদাত বরণ করেন।

উল্লেখ্য,এ যুদ্ধে আবু জেহেল নিহত হয়। যুদ্ধবন্দীদের প্রতি মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা:) মহানুভবতার পরিচয় দেন। হজরত মুহাম্মদ (সা:) বন্দীদের সাথে কোনো প্রকার নির্দয় ব্যবহার করা নিষিদ্ধ করেছিলেন। মুক্তিপণ গ্রহণ করে কুরাইশ বন্দীদেরকে মুক্তি প্রদান করা হয়। মাত্র ৪০০০ দিরহাম মুক্তিপণ নির্ধারিত হয়। যারা মুক্তিপণ দিতে অক্ষম তারা মুসলমানদের বিরোধিতা না করার প্রতিশ্রুতি প্রদান করে ও মুসলমান বালককে শিক্ষাদান করার অঙ্গীকার করে মুক্তি লাভ করে।

উল্লেখ্য, উকবা ও আরেকজনকে মুহাম্মদ সা:-এর বিরুদ্ধে শত্রুতা এবং ইসলামের অমর্যাদা করার জন্য প্রাণদণ্ড দেয়া হয়।

বদর যুদ্ধের শিক্ষাঃ- বদর যুদ্ধ মুসলমানদেরকে সর্বাবস্থায় আল্লাহর সাহায্য কামনা করতে শেখায়। বদরের যুদ্ধ স্মরণ করিয়ে দেয় যে, আল্লাহর ওপর দৃঢ় ঈমান ও নির্ভরতাই মুসলমানদের বিজয়ের মূল হাতিয়ার।

বদরের যুদ্ধ ইসলামকে সমুন্নত রাখার জন্য কাফির-মুশরিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করার নির্দেশ দেয়। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে মুসলিমরা ইসলামবিদ্বেষীদের কর্তৃক জুলুম নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন এবং ইসলাম বিদ্বেষীরা ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আর মুসলমানরা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে নীরবে বসে আছে। তা মোটেও ইসলামের শিক্ষা নয়। বরং আমাদের উচিত বদর যুদ্ধের ন্যায় জুলুমের মোকাবেলায় আল্লাহর সাহায্য চাওয়ার পাশাপাশি ধৈর্য, হেকমত অবলম্বনসহ ইসলামের সৌন্দর্যকে গোটা বিশ্বের সামনে তুলে ধরা এবং দ্বীন প্রচারের নিমিত্তে সহাবস্থান করা। তাহলে ইসলাম বিদ্বেষীরা একসময় ইসলামের ছায়াতলে আসবে নতুবা পিছু হটতে বাধ্য হবে। সুতরাং বলা যায় যে, সব যুগে বদর যুদ্ধ থেকে শিক্ষা নেয়ার প্রয়োজন থাকবে।

এই সম্পর্কিত আরও

আবুল কালাম
বিস্তারিত...
 আরবে ঈদের তারিখ ঘোষণা
বিস্তারিত...
813788_175
বিস্তারিত...
রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান
বিস্তারিত...
জান্নাতের ফুল
বিস্তারিত...
কাজী নজরুল ইসলাম
বিস্তারিত...